প্রকাশিত: ১১/০৮/২০১৮ ৫:৪৩ পিএম , আপডেট: ১৬/০৮/২০১৮ ১১:৩২ পিএম

বিবিসি বাংলা::
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরদোয়ান যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে ওয়াশিংটন যদি ‘একলা চলার এবং সম্মান না দেখানোর’ পথ ত্যাগ না করে তাহলে তার দেশ নতুন বন্ধু ও মিত্র খুঁজে নেবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার তুরস্কের ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর দ্বিগুণ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর এ মন্তব্য করেন মি. এরদোয়ান – যা নিউ ইয়র্ক টাইমসে বেরোয়।

শুল্ক বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তের পর থেকে ডলারের বিপরীতে তুর্কি মুদ্রা লিরার ১৮ শতাংশ দরপতন হয়েছে। তুরস্ক একটি অর্থনৈতিক সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আশংকা করছেন অনেকেই।

মি. এরদোয়ান নিউ ইয়র্ক টাইমসে লেখেন, যুক্তরাষ্ট্রকে তুরস্কের সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।

“ওদের যদি ডলার থাকে – তাহলে আমাদের আছে আমাদের জনগণ, আমাদের অধিকার এবং আমাদের আছেন আল্লাহ” – আংকারায় এক ভাষণে বলেন মি. এরদোয়ান।

মি. ট্রাম্প শুল্ক বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করে টুইট করার কিছু পরই মি. এরদোয়ান ফোনে কথা বলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে।

লিরার দর পতনের প্রেক্ষাপটে তুরস্কের ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রকরা এ নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক করতে যাচ্ছেন – এমন এক খবর বের হলেও পরে নিয়ন্ত্রকরা তা অস্বীকার করেন।

তুরস্ক ওআমেরিকার সম্পর্ক এত খারাপ হয়েছে কেন?
মি. এরদোয়ান ওয়াশিংটনের ওপর ক্ষুব্ধ – কারণ সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত কুর্দি যোদ্ধাদের অস্ত্র দিচ্ছে আমেরিকানরা, তা ছাড়া নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনকেও তারা বিচারের জন্য তুরস্কের হাতে তুলে দিচ্ছে না।

এ ছাড়া আংকারা যে রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা কেনার পরিকল্পনা করছে – সেটাও একটা বড় কারণ।অন্যদিকে আঙ্কারার অভিযোগ, ফেতুল্লাহ গুলেন পেনসিলভানিয়ায় তার বাড়িতে বসে মি. এরদোয়ানের বিরুদ্ধে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানের কলকাঠি নেড়েছিলেন।

মি. এরদোয়ান আরো বলেন, সন্ত্রাসের অভিযোগে তুরস্কে বিচারাধীন মার্কিন ধর্মযাজক এ্যান্ডু ব্রানসনের ব্যাপারে বিচারের প্রক্রিয়া শেষ হবার অপেক্ষা না করেই ওয়াশিংটন পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে।

মি. ব্রানসনের বিরুদ্ধে তুরস্কের অভিযোগ – তার সাথে কুর্দি ওয়ার্কার্স পার্টি এবং ফেতুল্লা গুলেনের সম্পর্ক আছে। আমেরিকার শক্তিশালী ইভানজেলিকাল খ্রিষ্টান লবি এ নিয়ে হৈচৈ শুরু করার পর এর জবাবে তুর্কী স্বরাষ্ট্র এবং বিচারমন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ওয়াশিংটন।

তুরস্কের মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কিছুদিন পরেই ট্রাম্প এই শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দিলেন।

এ ছাড়া আরো কারণ আছে।
তুরস্ক তাদের প্রায় অর্ধেক তেল আমদানি করে ইরান থেকে । সে কারণে ইরানের ওপর পুন:আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুরস্কের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করা হয়।

তুরস্কের মাটিতে আছে নেটো জোটের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইনজারলিক সামরিক বিমান ঘাঁটি। ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য নেটো এ ঘাঁটিটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে।

এ ঘাঁটিটি বন্ধ করে দেবার জন্য তুরস্কে অভ্যন্তরীণ চাপ আছে।

তুরস্কের কিছু সরকার সমর্থক আইনজীবীর অভিযোগ – ইনজারলিকে মোতায়েন কিছু আমেরিকান সেনা কর্মকর্তা এরদোয়ান-বিরোধী অভ্যুত্থানের পেছনে ভুমিকা রেখেছিলেন, এবং তাদের বিরুদ্ধে আদালতের কাছে গ্রেফতারি পরোয়ানাও চেয়েছিলেন তারা।

গত সপ্তাহে এক অভিযোগে এই আইনজীবীরা বিচারকের প্রতি আবেদন জানান – যেন ইনজারলিক থেকে সব বিমান উড্ডয়ন বন্ধ করে দেয়া হয়।

পাঠকের মতামত