প্রকাশিত: ২১/০৫/২০১৮ ১:১০ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:৪১ এএম

বিডি-জার্নাল :

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (এমপিওভুক্ত) শিক্ষকদের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পথ বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নীতিমালা করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী পরিষদের এমন উদ্যোগে সায় মিলেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বিষয়টি নিয়ে এখন কাজ করছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক প্রতিবেদন ও শিক্ষকদের অধিক মাত্রায় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার আলোকে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তবে সরকারের এমন উদ্যোগকে সংবিধান ও নাগরিকবিরোধী বলে আখ্যা দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।

আগামী নির্বাচনে শিক্ষকদের নির্বাচনের বাইরে রাখার জন্য কিছু দুর্নীতিবাজ আমলা এমন অপতৎপরতা শুরু করেছে বলে অভিযোগ তাদের। শিক্ষক নেতারা জানান, ২০১১ সালে স্থানীয় নির্বাচনে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ গ্রহণ ঠেকাতে প্রজ্ঞাপন হয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্টে গিয়ে এটি টিকেনি। এছাড়া আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার নীতিমালাতেও শিক্ষকদের পেশার বাইরে রাজনীতিসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড করার অধিকার স্বীকৃত।

বেসরকারি শিক্ষকরা (এমপিওভুক্ত) সরকারি কর্মকর্তাদের মতোই শতভাগ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন পান। সরকারি চাকরিজীবীদের নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান থাকলেও বেসরকারি শিক্ষকরা অধরা। এই সুযোগ নিয়ে বেশিরভাগ শিক্ষক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করে বেড়ান। শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত অনুপস্থিত থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হন শিক্ষার্থীরা। গোয়েন্দা সংস্থার এমন প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছেন। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের কার্যক্রম শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)।

সরকারি এমন উদ্যোগের ব্যাপক প্রক্রিয়া দেখিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। তবে শিক্ষক নেতারা এটাকে ‘চক্রান্ত’ হিসেবে দেখছেন। তাদের অভিযোগ, নির্বাচনে আগের সরকারের ভিতরে থাকার একটি পক্ষ শিক্ষকদের উস্কানোর চেষ্টা করছে। কোনো এ ধরনের আইন করতে পারবে না। কারণ ইউনেষ্কো ও আইএলও ৪৬টি ধারায় শিক্ষক রাজনীতি করতে পারবে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট বলা আছে। শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হলে আগে ইউনেস্কো ও আইএলও সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে হবে বলে জানান তারা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাউশি মহাপরিচালক প্রফেসর মাহাবুবুর রহমান গত বৃহস্পতিবার তার দপ্তরে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আমরা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করবো। বাস্তবতার আলোকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কলেজ ও প্রশাসনের পরিচালককে বলে দিয়েছি।

সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে রাজধানীর প্রেস ক্লাবে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করেন কয়েকটি শিক্ষক সংগঠন। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে কয়েকজন শিক্ষক নেতার উসকানিতে সারাদেশের শিক্ষকরা পাঠদান বন্ধ রেখে নানা ইস্যুতে আন্দোলন করছেন। বেতন দ্বিগুণ করার পরেও গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষকদের মাঠে নামিয়েছেন অনেক নেতা। সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষকরা রাজনীতি, ব্যবসাসহ বিভিন্ন লাভজনক কাজে সম্পৃক্ত। তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যক্তিগত কাজে বেশি সময় দেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বেসরকারি শিক্ষকদের রাজনীতি সীমিত বা নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে।

গত ২৯ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের চাকরি নিয়ন্ত্রণের সুনির্দিষ্ট কোনো বিধি-বিধান নেই। তারা অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হওয়ায় সার্বক্ষণিক রাজনীতি করেন। ফলে তারা শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ততটা আগ্রহী নন। এ কারণে মাঠপর্যায়ে এসব শিক্ষকের চাকরি নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সময় দুরূহ হয়ে পড়ে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়ে চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসের পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। চিঠিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৌঁছালে গত ৩০ এপ্রিল বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালককে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর মোহাম্মদ শামসুল হুদা বলেন, তারা নামে বেসরকারি শিক্ষক। কিন্তু শতভাগ সরকারি বেতনভুক্ত। এক কথায় তাদের সরকারি বলা যায়। কিন্তু সারা দেশে লাখ লাখ শিক্ষকদের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাদের বার্ষিক পারফরমেন্স রিপোর্ট (এসিআর) পর্যন্ত নেই। এ বিষয়টি আমরাও উদ্বিগ্ন। গুরুত্ব দিয়ে আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। সরকারি চাকরিজীবী যেমন চাকরিরত অবস্থায় রাজনীতি ও ব্যবসা করতে পারেন না, বেসরকারি শিক্ষকদের তেমননি রাজনীতি ও ব্যবসা বন্ধ করার পক্ষে আমি। ইচ্ছেমতো প্রতিষ্ঠানের অর্থ খরচ করেন। আর্থিক কোনো স্বচ্ছতা নেই।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এসিআর (বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন) আছে। তারপরও বার্ষিক পারফমেন্স রিপোর্ট জমা দিতে হয়। তিন মাস পরপর কতটুকু বাস্তবায়ন করেছি তার অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে হয়। তাদের (বেসরকারি শিক্ষক) এসিআর পর্যন্ত নেই। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন বাস্তবায়ন করতে গুরুত্ব দিয়ে আমরা কাজ করছি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় সময়ই শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকেন। মাঠ প্রশাসনের কাছ এ ধরনের অভিযোগ প্রায়ই আসে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। কারণ তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য সুদিনিষ্ট কোনো বিধি বিধান নেই। শুধু ম্যানেজিং কমিটি কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু শিক্ষকরা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় তারাও ব্যবস্থা নেন না। কারণ যে দলই ক্ষমতায় আসে তখন ওই দলের শিক্ষক নেতা তার পছন্দের ব্যক্তিকে নিজ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিতে বসান। তাকে ম্যানেজ করে শিক্ষকতার বাইরে ব্যবসা থেকে শুরু করে নানা কর্মকাণ্ড করে বেড়ান।

গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, শিক্ষকতা মহান পেশা হলেও পাঠদানে তাদের মনোযোগ নেই। অনেক শিক্ষক রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। এলাকার সালিশ বৈঠক করে বেড়ান। বাজার কমিটি, অটোরিকশা সমিতিসহ বিভিন্ন ধরনের বিতর্কিত সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করেন। স্থানীয় রাজনীতিবিদদের ‘লাঠিয়াল বাহিনী’ হিসেবে তারা কাজ করেন। প্রভাব বিস্তার করতে অনেক শিক্ষক নিজেরা মারামারিতেও জড়িয়ে পড়েন।

প্রতিষ্ঠান প্রধানরা শিক্ষকদের অনৈতিক কাজে বাধা দিলে তারা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেন। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধানও সরাসরি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত। তারা ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ আঁকড়ে আছেন। শিক্ষকরা পাঠদানের চেয়ে রাজনীতি নিয়ে বেশি ব্যস্থ থাকেন। এসব কারণে এখন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষকদের আগের মতো সম্মান করেন না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এমপিওভুক্তসহ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য শিক্ষক সরাসরি রাজনীতিক দলের পদে রয়েছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে অর্ধশতাধিক শিক্ষক নেতা মনোনয়নের দৌড়ে নেমেছেন। জনমত গড়ে তুলতে স্কুল-কলেজে পড়ানো বাদ দিয়ে তারা নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। মনোনয়ন নিশ্চিত করতে রাজধানীতে ছুটে যাচ্ছেন দলের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের কাছে।

আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইছেন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু। তিনি নির্বাচন করতে চান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (আশুগঞ্জ-সরাইল) আসন থেকে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহজাহান আলম সাজু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব এবং আশুগঞ্জের একটি কলেজের অধ্যক্ষ।

বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (বাকবিশিস) কার্যকরী সভাপতি অধ্যক্ষ মো. আবদুর রশীদ নির্বাচন করতে চান জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসন থেকে। তিনি রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ এবং তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চান আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষক সংগঠনের বৃহত্তম মোর্চা ‘জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টে’র আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ কলেজে শিক্ষক সমিতির (বাকশিস) সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হক। তিনি শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও রাজধানীর তেজগাঁও মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ।

অধ্যক্ষ আসাদুল হক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণসহ ১১ দফা দাবিতে শিক্ষকদের নিয়ে আন্দোলন করছেন। আন্দোলনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয়করণের আন্দোলনের নামে সারাদেশে শিক্ষকদের বার বার মাঠে নামানো হচ্ছে। এতে শিক্ষাকার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দাবি পূরণের বিষয়ে কোনো ধরনের আশ্বাস না দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে মাউশি সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে শিক্ষকদের সতর্ক করেছে।

অধ্যক্ষ আসাদুল হক বলেন, ইউনেস্কো ও আইএলও ৪৬ ধারায় শিক্ষকর রাজনীতির বিষয়ে স্পষ্ট বলা আছে। শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করতে হলে আগে ইউনেষ্কো ও আইএলওর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচনে শিক্ষকরা যাতে অংশ নিতে না পারে এজন্য একটি চক্রান্ত হচ্ছে। সরকারের ভেতরে থাকা একটা মহল নির্বাচনের আগে শিক্ষকদের উসকে দিতে এসব তৎপরতা শুরু করেছে।

মেহেরপুর-১ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চান শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের অতিরিক্ত মহাসচিব এবং বাংলাদেশ প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. জাকির হোসেন। জাকির হোসেনের মতো আরও অনেক শিক্ষক নেতা বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চান।

এছাড়া সারাদেশে অসংখ্য শিক্ষক উপজেলা চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, পৌর সভার মেয়র-কমিশনার, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার পদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন। তারা স্থানীয় এমপি ও সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। আইন করে শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করলে তাদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয়ে যাবে। শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।

মাউশি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশে এমপিভুক্ত চার লাখ ৭৭ হাজার ১৩০ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। তারা শতভাগ সরকারি বেতন-ভাতা পান। অবসরে গেলে নানা সুবিধা পান। সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়েও তারা রাজনীতি করছেন। এমনকি রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

বাকবিশিস কার্যকরী সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুর রশীদ বলেন, শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়, আমাদের দাবি জাতীয় সংসদের ১০ ভাগ আসন শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। তিনি বলেন, ব্যাংক লুটপাট, মাদক চোরাকারবারী, দুর্নীতিবাজ, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরা শিক্ষকদের আগামী নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য এসব তৎপরতা শুরু করেছে।

তিনি আরো বলেন, আমি রাজধানী, জেলা ও উপজেলা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আমরা কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল কলেজ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। অনার্সসহ ৩১টি কোর্সে পড়াশোনা হয়। আমি রাজনীতি করার কারণে কোনো সমস্যা হয়নি। অথচ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়, অনেক শিক্ষক কলেজে গিয়ে ঘুমায়। রাজনীতি করলেই যে প্রতিষ্ঠান মুখ থুবড়ে পড়বে তা কিন্তু না। বরং রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে তিনি একমত না বলে জানান।

শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া বলেন, এটি হবে কালো আইন। সরকার ইচ্ছে করলেও এটি করতে পারবে না। কারণ আইনে কাভার করবে না। একটি সরকার যখন স্বৈরাচার হয়ে যায় তখন এ ধরনের কালো আইন করতে চায়। তিনি বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে শিক্ষকরা অংশ নিতে পারবে না সরকারের এ প্রজ্ঞাপন হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল হয়েছিল। তার প্রশ্ন, শিক্ষকরা রাজনীতি করবে না তো আমলা, দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরা রাজনীতি করবে?

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও প্রবীণ শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, শিক্ষকরা রাজনীতি করতে পারবে না এটা ঠিক না। আর বিধি বিধান নেই বিষয়টি সঠিক না। কারণ শিক্ষকদের নৈতিক স্খলন অন্যান্য অপরাধের জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুনির্দিষ্ট আইন আছে।

পাঠকের মতামত

আশ্রয় নেওয়া বিজিপিদের বিনিময়ে বাংলাদেশি বন্দি মুক্তি দেবে মিয়ানমার

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) সদস্যদের ফেরানোর বদলে দেশটির জান্তা সরকারের কারাগারে থাকা ...