প্রকাশিত: ৩০/০৭/২০২০ ১১:১৭ এএম

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে এ বছর বিশ্বের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সৌদি সরকার সবমিলিয়ে এ বছর মাত্র ১০ হাজার জনকে হজ পালনের সুযোগ দিয়েছে। সুযোগ পাওয়াদের মধ্যে ৩০ শতাংশ সৌদি নাগরিক এবং ৭০ শতাংশ অন্যান্য দেশের নাগরিক।

বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) পবিত্র হজ পালিত হবে। ইতোমধ্যে হজযাত্রীরা মিনার তাবুতে অবস্থান করছেন। বিভিন্ন দেশের মধ্যে কোন দেশের কত সংখ্যক নাগরিক এবারের ব্যতিক্রমধর্মী এ হজ পালনের সুযোগ পাচ্ছেন, তা নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। এছাড়া এবার হজ কীভাবে পালিত হচ্ছে, পরিবেশ কেমন, হজযাত্রীরা কোথায় কীভাবে থাকছেন তা নিয়েও মুসল্লিদের আগ্রহ রয়েছে।

সৌদি আরবের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও বাংলাদেশ হজ মিশন সূত্রে জানা গেছে, এ বছর হজযাত্রীরা ভিআইপি মর্যাদায় হজ পালনের সুযোগ পাচ্ছেন। সব হজযাত্রীকে মক্কায় পাঁচ তারকা হোটেলে পৃথক পৃথক কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতি ২০ জন হজযাত্রীর ওমরাহ পালন ও তাওয়াফসহ হজ পর্যন্ত সকল আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য একজন করে গাইড নিয়োগ দেয়া হয়েছে। হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ার আগে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়।

প্রতিবছর মিনাতে হজযাত্রীদের তাবুতে রাখা হলেও এবার তাদেরকে পাঁচ তারকা সমমানের হোটেলে রাখা হয়েছে। মক্কা থেকে তাদেরকে অত্যাধুনিক গাড়িতে করে মিনায় নেয়া হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর হাজিদেরকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। প্রতি ৫০ জন হজযাত্রীর জন্য একজন করে অভিজ্ঞ চিকিৎসক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খাবার, পানি ও ফলমূলের পর্যাপ্ত সরবরাহ রাখা হয়েছে। প্রত্যেক হাজিকে একটি করে রিস্টব্যান্ড দেয়া হয়েছে, যেখানে তাদের তাপমাত্রা পরিমাপসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে রাখা হয়েছে। কোনো হজযাত্রীর জ্বর হলে বা অন্য কোনো অসুস্থতা দেখা দিলে তা সফটওয়্যারেই ধরা পড়বে। প্রতিটি হজযাত্রীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, জুলাইয়ের প্রথমে এক সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে হজ পালনে ইচ্ছুকদের নিবন্ধনের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হয়। সৌদি নাগরিকসহ বর্তমানে দেশটিতে অবস্থানরত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মধ্যে যারা ইতিপূর্বে হজ করেননি, যাদের বয়স ২০ থেকে ৬৫ বছর এবং ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতাসহ বিভিন্ন জটিল অসুখে ভুগছেন তাদের ছাড়া অপেক্ষাকৃত সুস্থদের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে ১০ হাজারের মতো হজযাত্রী নির্বাচিত করা হয়।

সৌদি আরবে বাংলাদেশ হজ মিশন সূত্রে জানা গেছে, কোন দেশের কত সংখ্যক নাগরিক এবারের হজে অংশগ্রহণ করছেন, সে ব্যাপারে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। ফলে সৌদিতে অবস্থানরত বাংলাদেশির মধ্যে থেকে কতজন সুযোগ পেয়েছে সে সম্পর্কে তথ্য নেই হজ মিশন কর্মকর্তাদের কাছে। শুধু বাংলাদেশেরই নয়, ভারত, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দূতাবাসের কেউ সঠিক তথ্য জানেন না। এবার বাংলাদেশ হজ মিশন কর্মকর্তা, অর্থাৎ ডিপ্লোমেটিক অফিসের কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের কেউ হজ পালনের সুযোগ পাচ্ছেন না।

বুধবার এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মক্কা বাংলাদেশ হজ মিশনের হজ কাউন্সিলর মাকসুদুর রহমান বলেন, এ বছর হজযাত্রীদের জন্য সৌদি সরকার চমৎকার আয়োজন করেছে। তাদের ব্যবস্থাপনায় সবাই বেশ খুশি।

সৌদিতে অবস্থানরত কতজন বাংলাদেশি হজ পালনের সুযোগ পেয়েছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য এ মুহূর্তে তার কাছে নেই। আমার জানা মতে ভারত, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ান দূতাবাস কর্মকর্তাদের কাছেও এ সংক্রান্ত তথ্য নেই।

মাকসুদুর রহমান বলেন, এ বছর মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি পবিত্র হজ পালন করা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু যারা এ বছর হজ পালন করার সুযোগ পাচ্ছেন তারা সত্যিকার অর্থেই সৌভাগ্যবান। তারা ‘ভিআইপি মর্যাদায়’ হজ পালনের সুযোগ পাচ্ছেন।

পাঠকের মতামত