প্রকাশিত: ০৫/০৩/২০১৮ ৮:১২ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৫:৪৯ এএম
ফাইল ছবি

তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার   ::

মিয়ানমারের তমব্রু সীমান্তে এবার হাতির পাল নেমেছে। মিয়ানমার সেনা ও সীমান্তরক্ষী বিজিপি সদস্যদের ধাওয়া দিচ্ছে ক্ষুব্ধ হাতিগুলোই। সীমান্তের শূন্য রেখার কাঁটাতার বেস্টনি এলাকায় জড়ো হয়ে হাতির পাল চিৎকার দিয়ে চলেছে অনবরত। শনিবার থেকে মিয়ানমারের তমব্রু সীমান্তে এমন অবস্থা বিরাজ করছে যে, এক প্রকার হাতির ভয়েই শূন্য রেখায় মিয়ানবাহিনীর অবস্থান নেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শনিবার সারারাত ধরে কয়েকটি পালের হাতি কাঁটাতার বেস্টনির পার্শ্বে অবস্থান নিয়ে গর্জন করেছে।

সীমান্তের বাংলাদেশের তমব্রু গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন ধরে সীমান্তের শূন্য রেখায় মিয়ানমার সেনা ও সীমান্তরক্ষী বিজিপি সদস্যদের মহড়া ঠেকাতে কোন লোকজনেরই দরকার পড়েনি।

মিয়ানমারের বন্য হাতির পালই এখন সীমান্তের শূন্য রেখা থেকে একের পর এক ধাওয়া দিচ্ছে সেনা ও বিজিপি সদস্যদের। ফলে গতকাল রবিবারও সীমান্তের শূন্য রেখায় মিয়ানমার বাহিনীর অবস্থান চোখে পড়েনি। তবে গতকাল সকালেও সেনা বোঝাই ৩/৪টি ট্রাক সীমান্ত সড়ক দিয়ে তমব্রু সীমান্ত এলাকা টহল দিতে দেখা গেছে।

এলাকাবাসী জানান, মূলত মিয়ানমার-বাংলাদেশের অরণ্যে বসবাসকারি হাতির পাল দুই দেশের মধ্যে চলাচল করে থাকে তমব্রু সীমান্ত দিয়ে। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আলী কবির জানান, তমব্রু সীমান্ত দিয়েই কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের উখিয়ার কুতুপালং এলাকার অরণ্যে চলাচল করে থাকে দু’দেশের হাতিগুলো।

উখিয়ার কুতুপালং থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ২০/২২ হাজার হেক্টর বনভূমিই মূলত এপাড়ের হাতিগুলোর বিচরণ ক্ষেত্র। কিন্তু গত ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য কুতুপালং থেকে টেকনাফের অরণ্যের হাতির বিচরণ ক্ষেত্রে আশ্রয় শিবির স্থাপন করা হয়। এ কারণে বাংলাদেশের বেশির ভাগ হাতি নিরাপদ আশ্রয় নিতে পাড়ি জমায় মিয়ানমারের অরণ্যে।

বান্দরবান ও কক্সবাজারের বনকর্মীরা জানান, এমন সময়ে খাদ্যের অন্বেষণে হাতিগুলো দু’দেশের এপার-ওপার যত্রতত্র চলাচল করে থাকে। এমনকি একটি হাতি দু’দেশের তমব্রু সীমান্ত দিয়ে এক দিনেই একাধিকবারও চলাচল করে থাকে। এবার এমন সময়ে এরকম চলাচল করতে গিয়ে হাতিগুলো বাঁধার মুখে পড়েছে। এ কারণেই মিয়ানমারের তমব্রু সীমান্তে হাতির পাল রাগে-ক্ষোভে ফুঁসছে।

দু’দেশের সীমান্তকে এ অংশে ভাগ করে দিয়েছে প্রবাহিত একটি ছোট্ট খাল। তমব্রু খাল নামে পরিচিত এ খালে নেমেই এমন শুষ্ক মৌসুমে বন্য হাতির পাল পানি পান করে থাকে। কিন্তু মিয়ানমার খালটির পূর্ব তীরে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ মজবুত কাঁটাতারের বেস্টনি দিয়েছে। এর আগে যদিওবা কাঁটাতার ছিল কিন্তু সেই সব হাতিগুলো মাড়িয়েই চলাচল করত। তবে এবার মিয়ানমার সরকার কাঁটাতারের বেস্টনি দিয়েছে একদম স্থায়ী পিলার দিয়ে।

এমনকি তমব্রু থেকে শুরম্ন করে সীমানেত্মর উত্তরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরের চাকঢালা এবং দক্ষিণে নাফ নদী তীর পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় ১০/১২ ফুট উঁচু করে কাঁটাতার দেওয়া হয়েছে। সীমান্তের কাঁটাতারের কারণেই হাতির পাল দু’দেশের চলাচল পথে আটকা পড়ে গেছে। শূন্য রেখার কাঁটাতারে আটকা পড়েই হাতিগুলো ক্ষোভে চিৎকার দিতে থাকে।

তমব্রু খালের এপাড়ের বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিক গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, বন্য হাতিগুলো এপাড়ে পার হতে না পেরেই ক্ষুব্ধ হবার বিষয়টি আমাদের অনুধাবন করতে কষ্ট হয় না। শনিবার দিন-রাতব্যাপী হাতির বিচরণ আমরা লক্ষ্য করেছি। একটি পালে দেখা গেছে ২৫/৩০টি পর্যন্ত হাতিও। এমনকি মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যদের ধাওয়া দিতেও দেখেছি।’

তিনি বলেন, আগে হাতিগুলো পায়ে কাঁটাতার মাড়িয়ে সীমান্ত পার হতে পারত। তখন কাঁটাতারের সীমানা সংলগ্ন ছিল মিয়ানমারের পুঁতা স্থল মাইনও। সীমান্তের শূন্য রেখা পার হতে গিয়ে এ পর্যন্ত বহুসংখ্যক বন্যহাতি এবং রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে। বর্তমানে সেইসব কাঁটাতারের পরিবর্তে অনেক মজবুত বেড়া দেওয়া হয়েছে শূন্য রেখায়। এসব কাঁটাতার দিয়ে এখন কোনো মানুষও পারাপার হওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তমব্রু কোনারপাড়া শূন্য রেখা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা নুরুল আমিন গতকাল জানান, ‘হাতির ধাওয়া খেয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা অগণিত সংখ্যক গুলিও ছোঁড়ে। শনিবার রাতভর হাতির পাল সীমান্তের একদম শূন্য রেখার কাছে অবস্থান নিয়ে এমনভাবে হাঁকডাক করেছে যে, আমাদের ঘুমেরও বেশ ব্যাঘাত হয়েছে।’

তিনি বলেন, শূন্য রেখা থেকে মিয়ানমার বাহিনীকে তাড়াতে এখন মিয়ানমারের বন্যহাতিই যথেষ্ট।

প্রসঙ্গত: বাংলাদেশের উখিয়া-টেকনাফে স্থাপিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এ পর্যন্ত বেশ ক’বার বন্যহাতি হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় এ পর্যন্ত ১২ জন রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটেছে। সেই সঙ্গে কমপক্ষে শতাধিক রোহিঙ্গা বস্তি ভাঙচুর হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সরকারের যুগ্ম সচিব এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম। সুত্র : কালেরকন্ঠ

পাঠকের মতামত

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এলেন আরও ৫৯ সেনা-বিজিপি সদস্য

আরাকান আর্মির হামলার মুখে ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যরা পালিয়ে বাংলাদেশের ঘুমধুম সীমান্ত ফাঁড়ির ...