প্রকাশিত: ১৭/০৯/২০১৯ ৯:৩৩ এএম

মেহেদী হাসান::
বাংলাদেশ থেকে এখনই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার বিরোধিতায় একাট্টা হয়েছে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)। গত কয়েক দিনে জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদে অন্তত ১১টি এনজিও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও তাদের ওপর নির্যাতনের বিচার ছাড়া প্রত্যাবাসনের যেকোনো উদ্যোগ বন্ধ করার সুপারিশ করেছে।

একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের পরিকল্পনারও বিরোধিতা করেছে ওই এনজিওগুলো। তাদের যুক্তি, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। তবে কয়েকটি এনজিও পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টিরও সুপারিশ করেছে।
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর দ্য ইলিমিনেশন অব অল ফর্মস অব রেসিয়্যাল ডিসক্রিমিনেশন, ইন্ডিয়ান মুভমেন্ট ‘টুপাজ আমারু’, ইন্টারন্যাশনাল-ল’ইয়ারস ডট ওআরজি, ইউনাইটেড টাউন্স এজেন্সি ফর নর্থ সাউথ কো-অপারেশন, ইউনিয়ন অব আরব জুরিস্টস, ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট, ওয়ার্ল্ড পিস কাউন্সিল—এই সাতটি এনজিও গত ২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য গ্রহণযোগ্য পরিবেশ মিয়ানমারে আছে বলে মনে হয় না। রোহিঙ্গাদের তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্যত্র স্থানান্তরও আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার ব্যাপারে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কথা বলতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ওই সাতটি আন্তর্জাতিক এনজিও। তারা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন, চলাফেরার স্বাধীনতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগসহ পূর্ণ মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া তারা মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিকসহ সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও যৌন সহিংসতার জন্য দায়ী মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর অধিনায়কদের আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (আইসিসি) বিচারের মুখোমুখি করতে বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

জার্মানভিত্তিক এনজিও সোসাইটি ফর থ্রেটেন্ড পিপলস (এসটিপি) গত ২১ আগস্ট জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদকে লিখিতভাবে জানিয়েছিল, এসটিপি ও ইউরোপিয়ন রোহিঙ্গা কাউন্সিল (ইআরসি) মনে করে যে রাখাইন রাজ্যে যত দিন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ‘জেনোসাইডের’ শিকার হওয়ার ভয় আছে এবং মতপ্রকাশ ও চলাফেরার স্বাধীনতা নেই তত দিন পর্যন্ত তাদের ফিরে যাওয়ার কোনো যুক্তি নেই।

এসটিপি বলেছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সিতুয়েতে এখনো অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের শিবিরে (আইডিপি) সোয়া এক লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। যারা ভুক্তভোগী (বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বোঝাতে) তাদের মত ছাড়া প্রত্যাবাসন শুরু করার উদ্যোগ কলঙ্কজনক। রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ১৯৮২ সালের আগে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে যে নাগরিক অধিকারগুলো পেত সেগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হলে তারা স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে রাজি হবে না।

জার্মানভিত্তিক এনজিও এসটিপি বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে মিয়ানমারে তাদের পূর্ণ নাগরিকত্ব পাওয়ার ওপর জোর দিয়েছে। এ দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনকের চেয়েও বেশি কিছু বলে উল্লেখ করে এসটিপি বলেছে, ‘কোনো পরিস্থিতিতেই তাদের জোর করে ভাসানচরে স্থানান্তর আমরা মানতে পারি না। জাতিসংঘ এই পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত হলে তা কলঙ্কজনক হবে। ’ এসটিপি জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ থামানো নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনজিও জুবিলি ক্যাম্পেইন গত ২২ আগস্ট জাতিসংঘ মহাসচিবের মাধ্যমে মানবাধিকার পরিষদকে লিখিতভাবে জানায়, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার বাহিনীর জেনোসাইড, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের পর এখনো সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ায় রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরতে পারে না।

মিশরভিত্তিক এনজিও ‘ম্যাট ফর পিস, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশন’ মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার করার দায়িত্ব আইসিসিকে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ম্যাট মনে করে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর এখনো নিপীড়ন চলছে।

এনজিও ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট বলেছে, মিয়ানমারে সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত দেশটির সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক বা সামরিক সহযোগিতা সীমিত রাখা উচিত। অ্যাসোসিয়েশন অব হিউম্যানিটারিয়ান ল’ইয়ারসও একই মনোভাব ব্যক্ত করেছে।

গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শিবিরে নজরদারি বাড়িয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনবিরোধী হতে এনজিওগুলোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করতে আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। সুত্র : কালেরকন্ঠ

পাঠকের মতামত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ

‘ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরনি বেহেশতী/দুষমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তি’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ...