প্রকাশিত: ২৪/০৯/২০২১ ৬:১৫ পিএম

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর থেকে শিশুসহ ১১০০ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে। শুধু জুলাই মাসেই ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সি ৭৫ শিশুকে হত্যা করেছে তারা। আর গ্রেফতারের লক্ষ্যবস্তু হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে না পেলে তাদের পরিবারের সদস্যদের অপহরণ করা হচ্ছে। বাদ পড়ছে না শিশুরাও। মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রু এসব তথ্য জানিয়েছেন। বলেছেন, সব আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এদিকে ভারতের সীমান্ত লাগোয়া মিয়ানমারের শহরগুলোতে জান্তাবিরোধী মিলিশিয়ারা ও দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে নিয়মিত সংঘর্ষ হচ্ছে। এর জেরে সেখানকার অধিবাসীরা বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে শুরু করেছেন। জান্তাবিরোধী মিলিশিয়া দাবি করেছে, তারা ৩০ সেনাকে হত্যা করেছে।

১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে ৮ হাজারেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে। যারাই সেনা শাসকদের বিরোধিতা করেছে তাদেরই আটক করা হয়। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে না পেলে তাদের আত্মীয়দের কৌশলে অপহরণ করছে দেশটির সামরিক জান্তা। বুধবার জাতিসংঘের বিশেষ দূত বলেন, আমি নির্ভরযোগ্য তথ্য পেয়েছি যে জান্তা সরকার অন্তত ১৭৭ জনকে অভিযান চালিয়ে আটক করেছে। তাদের মধ্যে ২০ সপ্তাহ বয়সি শিশুও আছে। মানবাধিকার পরিষদকে টম অ্যান্ড্রু বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কোনো প্রচেষ্টা কাজে লাগছে না।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই পরিস্থিতি পাল্টানোতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান অ্যান্ড্রু। তিনি বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, মৃত্যু এড়াতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। মিয়ানমারে থ্যান্টল্যাং শহরে সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের খবর মিলেছে। গত সপ্তাহান্তে অন্তত ২০টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিদ্রোহীদের দাবি, তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৩০ জন সেনা মারা গেছে। লড়াই তীব্র হতেই মানুষ ঘর ছেড়ে পালাতে শুরু করেছেন। স্থানীয় মিডিয়া বুধবার জানিয়েছে, সেনা সাধারণ মানুষের বাড়িতে বোমা ফেলছে। তাই শহরের ১০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে প্রায় সবাই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে আশপাশের এলাকায় চলে গেছেন। অনেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকেছেন বলে এক স্থানীয় নেতা জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাকে জানান, সোমবার সেনা সদস্যরা এলোপাতাড়িভাবে বাড়ির জানালায় গুলি করতে শুরু করে। এরপর শহরের বাসিন্দারা পালাতে শুরু করে। তিনি বলেন, ‘প্রায় সবাই পালিয়ে গেছে। পাশের গ্রামের ৫০০ জন বাসিন্দাও ভারতের উদ্দেশে পালাতে শুরু করেছে।’ ভারতে পালানো আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আমি কখনও বাড়ি থেকে পালানোর কথা ভাবিনি। কিন্তু সেনা সদস্যরা আমার বাড়ি বোমা দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে। আমি পালাতে বাধ্য হয়েছি।’

জান্তা মুখপাত্র জাও মিন থুন এসব খবরকে ভুয়া বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ১৮ সেপ্টেম্বর সংঘাতে একটি সরকারি ভবন ও ২০টি বাড়ি আগুনে পুড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত জান্তা সরকারের কারণে বাস্তুহারা হয়েছেন ২ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি বেসামরিক। টম অ্যান্ড্রু বলেছেন, ৩০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। সুত্র:সময়ের আলো

পাঠকের মতামত