প্রকাশিত: ০৮/০৮/২০১৯ ১২:০০ পিএম

৩১ জানুয়ারি ২০১৭, রোজ মঙ্গলবার। সেদিন সকালে উখিয়া উত্তর স্টেশনের একটি বাড়িতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিল। প্রায় ঘন্টা খানিকের মধ্যে সবটা পুড়ে যেতে লাগল। আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য মানুষ আপ্রাণ চেষ্টা করছিল। চারদিকে হৈচৈ পড়ে গেল। যাদের ঘর পুড়ে গেছে তাদের আহাজারিতে সকলের বুক কেঁপে উঠে। সবচেয়ে দুঃখ জনক ব্যাপার হল ঘর পুড়ে যাওয়া মানুষের মধ্যে একজন এস.এস.সি পরীক্ষার্থীও ছিল। পরের দিন ১ ফেব্রুয়ারি তার পরীক্ষা ছিল। তার নাম ছিল “জুলি”। তার বই খাতা, কাপড়, পরীক্ষার কাগজ পত্র পুড়ে গেল। সে ছিল উখিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। তাকে মানবতা দেখাতে অনেকে এগিয়ে এসেছিল। দায়িত্ব নিয়েছিল তার পড়া লেখার। কিন্তু যে ব্যক্তি সর্বোচ্চ মানবতা দেখিয়েছিল তার কথাটি অপ্রকাশিত থেকেই যায়। চলুন শোনা যাক সেই মানবিক ব্যক্তির কথা।

সেই মানবিক ব্যক্তিটি হলেন, উখিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব আবুল হোসাইন সিরাজী স্যার। পুড়ে যাওয়া বাড়িটির পাশেই ওনার বাসা ছিল। তিনি জানতে পারার পর আমাকে ফোন করে ওনার অফিসে ডাকলেন। আমি কয়েক মিনিটের মধ্যে হাজির হলাম। স্যার বললেন, “মেয়েটি কোন বিভাগে পড়ে?” আমি বললাম, “ব্যবসা বিভাগে স্যার”। স্যারের কাছে সব বইয়ের সৌজন্যে সংখ্যা ছিল। সেখান থেকে যেসব বই মেয়েটির জন্য দরকার সেগুলো আমাকে দিলেন। স্যার বললেন, “বইগুলো মেয়েটি দিয়ে আয়। তার ঘরতো পুড়ে গেল। সে থাকবে কই? আমি আমার মেয়েকে তাদের বাসায় পাঠাচ্ছি। ছাত্রীটিকে আমার মেয়ের সাথে আমার বাসায় থাকতে বল। তার স্কুল ড্রেসটাও পুড়ে গেল। কালকে পরীক্ষা হলে ড্রেস ছাড়া গেলে তার মনটা ছোট হয়ে যাবে। আমি “কলেজ টেইলার্স” এ বলে দিছি। তাকে বল কারো সাথে গিয়ে মাপটা দিতে। রাতের মধ্যে ড্রেস রেডি করে দিবে তারা। সব টাকা আমি দিব।” তারপর আমি স্যারের কথা অনুযায়ী সব কাজ করলাম। স্যার শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ করে মেয়েটির সব কাগজ পত্র সংগ্রহ করলেন।

তারপর প্রায় রাতের ১ টা বেজে গেল। আমি আর হাবিব স্যার, হেডস্যার অফিসে ছিলাম। মেয়েটির স্কুল ড্রেস চলে আসল অফিসে। তারপর আমি আর হাবিব স্যার মটর বাইকে করে কনকনে শীত উপেক্ষা ড্রেসটি তার বাড়ি পৌঁছে দিলাম।

মেয়েটি অবশেষে পরীক্ষা শেষ করল। তার রেজাল্ট প্রকাশিত হলে সে জি.পি.এ ৫.০০ পায়। খবরটা শুনে খুশি হলাম। রেজাল্ট এর পরের দিন মেয়েটির মা আমার বাসায় আসলেন। কিন্তু আমি বাসায় ছিলাম না। ওনি আমার মাকে বললেন, “জিসান সেদিন অনেক কষ্ট করেছে আমাদের জন্য। ওকে বলিয়েনখবরটা। আমার জুলি A+ পেয়েছে।”

আমি বাসায় আসার পর মা আমাকে সব বললেন। এমন মানবিক মানুষ গুলো বেঁচে থাকুক হাজারো বছর ধরে।

লেখক:
হাসেম সিকদার জিসান:
সাবেক স্টুডেন্টস কেবিনেট প্রাধান
উখিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজার।

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...

একটি ফুল—

একটি ফুল, একটি ফুলের জন্যে কতো নিষ্পাপ গাছ প্রাণ হারালো, এই বর্বর শুকোনের দল বারংবার ...