প্রকাশিত: ১৩/১২/২০১৮ ৫:৪৯ পিএম

জালাল উদ্দীন জুবাইর :

অনেকদিন ধরে লিখব লিখব বলে লিখা হচ্ছেনা। খুব গুছিয়ে লিখার অভ্যাসটাও আমার নাই। কিভাবে শুরু করব সেটাও ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা। তাই একটু ধৈর্য্য ধরে পড়ার অনুরোধ করছি। আমরা উখিয়া টেকনাফের মানুষ খুব একটা ভালো নেই। আপনারা মানেন আর না মানেন উখিয়া- টেকনাফ অনেকটা বন্ধি। হয়তো কথাটা অনেকের কাছে অতিরঞ্জিতও মনে হতে পারে। বিগত সালে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে বিষয়টা চরম আকার ধারন করেছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রায় দুইগুন রোহিঙ্গা আমাদের চারপাশে বাস করছে। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন সংরক্ষিত বিশাল বনাঞ্চল কেটে তৈরি করা হয়েছে তাদের আবাসস্থল। যেটা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেখানে স্থানীয় জনগোষ্ঠী এই সংরক্ষিত বনাঞ্চলে লাকড়ি আনতে গেলেই মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে জেলে যায় সেখানে এই রোহিঙ্গারা রীতিমত বন-পাহাড় ধ্বংসের মহা উৎসব করছে। যেন ছোট বেলায় বাড়িতে কোন অথিতি বেড়াতে আসলে তাদের বাচ্ছার দখলে চলে যেত আমার অতি প্রিয় খেলনা গুলো। তার উপর নালিশ দিতে গেলেই আম্মুর চোখ রাঙ্গানী। আমার জানামতে আগে থেকে এক প্রজন্ম বা তথোধিক প্রজন্ম ধরে যেসব রোহিঙ্গারা বাস করে আসছে তাদের প্রায় ৬০-৭০ শতাংশই বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্র করে বাংলাদেশী নাগরিক হয়ে আছে। ( তথ্য প্রমান আছে) । এই আগে থেকে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে তারা অত্যান্ত শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করছে। যারা বিভিন্ন পার্বত্য অঞ্চল বা অন্যান্য এলাকায় গিয়ে জাতীয় জাতীয় পরিচয় পত্র করছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি সরকার রোহিঙ্গা আগমনের পর থেকে কক্সবাজার জেলায় জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রাখলেও তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তাদের সন্তানদের জন্মনিবন্ধন তৈরি করছে। যদিও স্থানীয় জনগোষ্ঠী এই বিষয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ইয়াবা অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে এমনিতেই অনেক ভোগান্তিতে ছিল মানুষ। তারপর মড়ার উপর খাড়ার ঘা হিসাবে যোগ হল নতুন লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা আগমন। কক্সবাজার টেকনাফ মহাসড়কে ৭ বা তথোধিক চেক পোস্টে জাতীয় পরিচয় পত্র দেখিয়ে প্রমান করতে হয় যে আমরা আসলেই বাংলাদেশী। আমি জানিনা আসলে এইটা বাংলাদেশের আর কোন অঞ্চলের মানুষদের সম্মুখীন হতে হয় কিনা। খুবই খারাপ লাগে যখন দেখি রাস্তায় গাড়ি দাড় করিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের জাতীয়তা যাচাইয়ে ব্যস্ত ঠিক তখন বিকল্প উপায়ে রোহিঙ্গারা নিরাপদে যাতায়াত করে। আর যারা পুরাতন তারা তো এককাটি সরস। জাল আইডি কার্ড করে নিবিঘ্নে চলাফেরা করছে। কারন যেসব চেকপোস্টে জাতীয় পরিচয় পত্র চেক করা তাদের কাছে এমন কোন মেশিন বা প্রযুক্তির ব্যবস্থা নেই যেটা দিয়ে তারা আসল নকল শনাক্ত করতে পারবে। আমার মনে হয়না এনজিও সংস্থা গুলো রোহিঙ্গাদের সহজে মায়ানমারে ফেরত পাঠাতে দিবে। প্রায় ৩০টির উপরে এনজিও সংস্থা রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছে। রোহিঙ্গারা ফেরত গেলে তাদের মিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মানবতা বানিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষেও দ্রুত এই মহা সমাস্যাটি সমাধান করা সম্ভব নয়। কারন আন্তার্জাতিক বিভিন্ন চাপ সৃষ্টি হবে। একবার ভেবে দেখেছেন কি আগামী ১০ বছরে যদি রাহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো না যায় তাহলে আমাদের অবস্থা কি হবে? সন্তান জন্মদানে রোহিঙ্গা উর্বরা নারীরা যদি বর্তমানের মতো উচ্চ হারে সন্তান জন্ম দেয় তাহলে আগামী ১৫-২০ বছরে বর্তমান রোহিঙ্গা জনগোষ্টির কতগুন হবে ভেবে দেখছেন??? তাছাড়া রোহিঙ্গা আর স্থানীয় জনগোষ্টির মধ্যে খুব সামান্য ভাষাগত অমিল ছাড়া শারিরীক গঠনের দিক থেকে প্রায় মিল। তাই যে সকল রোহিঙ্গা প্রজন্ম প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাংলাদেশের পরিবেশে বড় হবে তাদের সাথে স্থানীয় নতুন প্রজন্মের মধ্যে দৃশ্যমান কোন পার্থক্য থাকবেনা। তখনই শুরু হবে আসল জাতীয় সমস্যা। তখন সেটা কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবেনা। আমরা স্থানীয়রা হয়ে যাব সংখ্যা লঘু। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে উখিয়া-টেকনাফ তথা কক্সবাজারের একাংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও আশ্চর্যের কিছু হবেনা। কারন ৫-৬ প্রজন্মের পর তারাও জন্মসূত্রে বাংলাদেশী নাগরিকের দাবী তুলবে। সেই সময় তাদের উসকে দেওয়ার মতো আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কু-চক্রি মহল তো আছে। আমরা স্থানীয় জনগন পৃথিবীর বুকে আরেকটি নব্য ফিলিস্তিন হতে চায়না। যারা মানবিকতার খাতিরে আশ্রয় দিতে গিয়ে নিজেরাই পরাধীন হয়ে যায়। তাই আমি এই বিশাল সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমার কিছু নিজস্ব প্রস্তাবনা তুলে ধরছি।
# প্রস্তাবনা#
# ০১: এই সমস্যা সমাধানে একটা আলাদা কমিশন গঠন করা। যাদের প্রাথমিক কাজ হবে ইতিমধ্যে বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয় পত্র করা রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করা এবং তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা।
# ০২: যে সকল স্থানীয় কু-চক্রী মহল, জনপ্রতিনিধি, জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরির সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, নির্বাচন কমিশনের অসাধু কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তা যারা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানের মতো দেশদ্রোহী কাজে লিপ্ত তাদের সনাক্ত করা এবং স্পেশাল ট্রাইবুনাল গঠন করে তাদের দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা।
#০৩ : জন্মের সাথে সাথে প্রত্যেক রোহিঙ্গাদের তালিকাভূক্ত করা এবং তাদের ফিঙ্গার ফ্রিন্টসহ একটি বিশেষ পরিচয় পত্র দেওয়া।
#০৪ : বাংলাদেশের প্রত্যেক সরকারী, আধা সরকারী, বেসরকারী প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি কার্যক্রমে ছাত্র ছাত্রীদের জন্মনিবন্ধন, পিতা মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের মাধ্যমে ভর্তি নিশ্চিত করা এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পরিচয় পত্র সনাক্ত করনে শতভাগ সক্ষম করে তোলা।
#০৫: প্রত্যেক কর্মক্ষম রোহিঙ্গাকে যোগ্যতা অনুযায়ী স্থানীয় বাংলাদেশী নাগরিক বা কোম্পানীর অধিনে কিছু নির্দিষ্ট পেশায় নিয়োজিত রাখা। ( বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী প্রবাসীরা যেভাবে কপিলের অধীনে কাজ করে থাকে সেই ভাবে)।
# ০৬: রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য আলাদা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা। তাদের জন্য বার্মিজ ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। )
# ০৭: বিভিন্ন বিদেশী এনজিওর কার্যক্রম সীমিত করা এবং তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমে সতর্ক নজর রাখা।
# ০৮: রোহিঙ্গাদের মধ্যে কোন উগ্রপন্থী গোষ্টির উদয় হলে তাদের কঠোর হাতে দমন করা।
# ০৯: বাংলাদেশীদের সাথে রাহিঙ্গাদের বিবাহ নিষিদ্ধ করা।
কষ্ট করে পড়ার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনাদের সু-চিন্তিত মতামত আশা করছি।

(লেখক, সমমান (অর্নাস) ফাইনাল পরীক্ষার্থী কক্সবাজার বিশ্ববিদ্যালয় সরকারী কলেজ।)

পাঠকের মতামত