প্রকাশিত: ১৪/০৭/২০১৯ ২:৪৩ পিএম , আপডেট: ১৪/০৭/২০১৯ ২:৪৪ পিএম

অধ্যক্ষ এম. ফজলুল করিম:
উখিয়া কলেজে মাত্র ১৩জন শিক্ষার্থী নিয়ে ১৯৯২সনের ১জানুয়ারি কলেজের সর্বপ্রথম পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। তৎকালীন ইউএনও ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বিলাসী গল্প দিয়ে পাঠদান শুরু করেছিলেন।

১৯৯২সনে ১ জানুয়ারিতে শুরু করা কলেজে ১৯৯৩ সালে কারিগরী বোর্ডের অধীনে বি.এম শাখার ২টি কম্পিউটার অপারেশন ও মানব সম্পদ উন্নয়ন দুইটি ট্রেড চালু হয়। ২০১৯ সনে এসে ২১৫০ শিক্ষার্থীতে উন্নীত হয়েছে। কলেজেটি শুরু হয়েছিল শুধুমাত্র মানবিক বিভাগ দিয়ে। ১৯৯২ সনে বাণিজ্য বিভাগ (বর্তমানে ব্যবসায় শিক্ষা), ১৯৯৩ সনে বিজ্ঞান বিভাগসহ পূর্ণাঙ্গ ইন্টারমিডিয়েট কলেজে রূপান্তরিত হয়।

১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ¯œাতক (পাস) বিএ/বিএসএস/বিবিএ সহ ডিগ্রী কলেজে উন্নীত হয়। অর্থাৎ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি অর্জন করে।

২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে বাংলা, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ¯œাতক (সম্মান) শ্রেণি শুরু হয়। পরবর্তীতে সমাজ বিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়। অর্থাৎ প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে উন্নীত হয়েছে।

২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষে ৪টি বিষয়ের শিক্ষার্থীরা অনার্স চুড়ান্ত পরীক্ষা সম্পন্ন করে ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে মাষ্টার্স শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ২০২০সালে সমাজ বিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের শিক্ষার্থীরাও ¯œাতক (সম্মান) চুড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। পাশাপাশি ২০২০ সালে বাংলা, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, হিসাব বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়সমূহে মাষ্টার্স শ্রেণি চালু হবে ইনশাল্লাহ।

অত্র কলেজের শিক্ষার্থীরা কিংবা বোদ্ধা লোকদের উপরোক্ত বিষয় সমূহ চোখে পড়ে না। অত্র কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্নস্তরে চাকুরি করে দেশের জন্য অবদান রেখে যাচ্ছেন।

উখিয়ায় এমন কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ নেই যেখানে অত্র কলেজের সার্টিফিকেটধারী শিক্ষার্থী নেই। অনেক শিক্ষার্থী ম্যাজিষ্ট্রেট, ওসি, এ.এস.পি, র‌্যাব, বিজিবি, প্রফেসর, ব্যাংকার, সাংবাদিক, এনজিওকর্মী ও রাজনীতিবিদ সহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

অত্র কলেজের অসংখ্য শিক্ষার্থী ইংল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, সুইডেন, ডেনমার্ক, ইতালি, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, মালেয়শিয়া অর্থাৎ প্রতিটি উন্নত রাষ্ট্রে অত্র কলেজের সার্টিফিকেটধারী শিক্ষার্থী অর্থ উপার্জনে ব্যস্ত আছেন।

উখিয়া-টেকনাফের (কক্সবাজার-৪) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আকতার চৌধুরী, রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের সফল চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, ইউ.পি সদস্য সালা উদ্দিন, ইউ.পি সদস্য সরওয়ার কামাল পাশাসহ অসংখ্য জনপ্রতিনিধি এই কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।

ইউএনএইচসিআর, আইওএম, ডাব্লিউএফপি, এমএসএফসহ প্রতিটি এনজিওতে শত শত শিক্ষার্থী কর্মরত আছেন। ইতোমধ্যে অনেকে ইউএন কর্মচারিতে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২০% চাকুরীজীবি উখিয়া কলেজের সার্টিফিকেটধারী। তাহলে বুঝতে হবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক সহযোগিতায় অত্র কলেজের শিক্ষার্থীরাও কাজ করে যাচ্ছে।

অত্র কলেজে ইন্টারমিডিয়েট শ্রেণির শিক্ষার্থীর ১২ মাসের বেতন, ভর্তি ফি: ও অন্যান্য ফি: সহ মোট ৩৬৫০টাকা, মাসিক বেতন ১২০ টাকা, ডিগ্রীতে মাসিক বেতন ১৫০ টাকা, পাশাপাশি কক্সবাজার সিটি কলেজে ভর্তি ৫০০০টাকা, মাসিক বেতন ৫০০টাকা, এছাড়াও কলেজ পরিবর্তন ফি: ৫০০০টাকা, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করলে জরিমানা দিতে হয়। যাতে ১ টাকাও মওকূপ করে না কলেজ কর্তৃপক্ষ।

উখিয়া কলেজে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২১৫০জন। জনপ্রতি বার্ষিক বাস ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১০০০টাকা। অর্থাৎ ২১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। রাস্তার দূরত্ব মরিচ্যা যৌথ চেকপোষ্ট টু হোয়াইক্ষ্যং। দৈনিক ডিজেল প্রয়োজন ৪০ লিটার। ড্রাইভার, হেলপার, জ্বালানি ও অন্যান্য খরচ বাবদ বার্ষিক খরচ হিসেব করলে উল্টো ঘাটতি থাকবে।

কক্সবাজার সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীদেরও বার্ষিক বাস ভাড়া ১০০০টাকা। তাদের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮ হাজারের অধিক। আদায়কৃত অর্থের পরিমাণ ৮০ লক্ষ টাকা। রাস্তার দূরত্ব কক্সবাজার থেকে লিং রোড। দৈনিক ডিজেল প্রয়োজন হয় ৫ লিটার। বিষয়গুলো কারো চোখে পড়ে না। শুধুমাত্র উখিয়া কলেজ নিয়ে সবার মাথা ব্যাথা।

কক্সবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষকরা ১০০% বেতন পায়। তার উপর ৪০% ঘর ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, ইনক্রিমেন্ট, প্রফিডেন্ট ফান্ড সবকিছুতে ভরপুর। আমরা উখিয়া কলেজের শিক্ষকদের ৩৬ মাসের স্থানীয় তহবিলের বেতন বাকী। প্রফিডেন্ট ফান্ড ১০% বাকী। ঘর ভাড়া শুধুমাত্র ৫০০টাকা, চিকিৎসা ভাতা শুধুমাত্র ১০০০টাকা। কোন ইনক্রিমেন্ট নেই। কিন্তু উখিয়া কলেজে সামান্য পরিমাণ কিছু হলে সেটা সবাই দেখে এবং বিচার-বিশ্লেষণ না করে সবাই কথা বলে। এইচএসসি, ডিগ্রী (পাস) ও ৭ বিষয়ে অনার্স পড়ার সুযোগ যে উখিয়ায় হয়েছে সে দিকে কারো দৃষ্টি নেই।

কলেজ তহবিল থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে অনার্স ভবন নির্মাণ, ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে দৃষ্টি নন্দন শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও সম্প্রতি ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলার সম্প্রসারণ কাজ শুরু হয়েছে।

কলেজের উন্নয়নের জন্য ফান্ডের টাকা খরচ না করলে আমাদের ৩৬ মাসের বেতন স্থানীয় তহবিলের ২০% টাকা বাকী থাকতো না। ১০% প্রফিডেন্ট ফান্ড পরিশোধ করতে পারতাম।

১৯৯১ সালে দক্ষিণ কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় প্রথম উখিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারিকরণ করার ক্ষেত্রে প্রবীণ এই কলেজটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নামের কারণে উখিয়া কলেজটি সরকারিকরণ থেকে বাদ পড়েছে। পুরো বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়ন সমূহ সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু দক্ষিণ কক্সবাজারের প্রবীণ এবং সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ উখিয়া কলেজটি সরকারিকরণ বাদ পড়ায় অত্যন্ত দু:খজনক।

সুতরাং তুলনামুলক আলোচনা করলে রামু কলেজ, সিটি কলেজ, ঈদগাহ কলেজ, দুলাহাজরা কলেজ, কোন কলেজে স্থানীয় তহবিলের বেতন বকেয়া নেই। অথচ উখিয়া কলেজে ৩৬ মাসের বকেয়া। ১০% প্রফিডেন্ট ফান্ড বাকী ৪০ মাসের। প্রমোশন, ইনক্রিমেন্ট এগুলো উখিয়া কলেজে নেই। তারপরও উখিয়া কলেজে একটি পিপড়া হাটলেই শিক্ষার্থী বলেন, নেতা বলেন, সচেতন সমাজ বলেন, তারা শুধু উখিয়া কলেজের গুলি দেখেন। অন্যদিকে মন, চোখ যায় না। দেখার চেষ্টাও করে না। এখনও দোয়া করি উখিয়া কলেজের কার্যক্রম গুলো সমালোচকেরা যেন বেশি দৃষ্টি রাখেন। সমালোচনা না করে শুধু বদনাম করবেন ? এর মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই। সমালোচকেরা শান্তিতে ঘুমাক সেটা আমি চাই।

এক সময় সারা উখিয়ায় তথা কক্সবাজার জেলা উখিয়া কলেজ গঠনের বিরুদ্ধে ছিল। আমি অধ্যক্ষ ফজলুল করিম ১৯৯১ থেকে অধ্যক্ষ হিসেবে আছি। অনেকে বিরোধিতা করেছে। কে পক্ষে করেছে, কে বিপক্ষে করেছে, সেই গুলো আমি অক্ষরে অক্ষরে জানি। সে গুলো বললে অনেকের মন খারাপ হয়ে যাবে। এখন যারা কলেজে চাকুরি করতেছে। তারা তো সুখের নীড়ে খাচ্ছে, নি:চিন্তে ঘুমাচ্ছে ও চাকুরি করছে। পুরো কক্সবাজারের বিরুদ্ধে লড়ে উখিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। যারা বিরোধিতা করেছিল, আমি তাঁদের জন্য দোয়া করছি। সুন্দর মন-মানসিকতা সৃষ্টি হওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আজ আর নয়। চলবে…

লেখক :
প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, উখিয়া কলেজ, উখিয়া, কক্সবাজার। মোবাইল- ০১৮১৯৫২৪৭৮৩

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...

একটি ফুল—

একটি ফুল, একটি ফুলের জন্যে কতো নিষ্পাপ গাছ প্রাণ হারালো, এই বর্বর শুকোনের দল বারংবার ...