প্রকাশিত: ২৮/০৬/২০২০ ১২:১৬ পিএম

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য সংকটের শুরু থেকেই কক্সবাজারে মানবিক সহায়তা কাজে নিয়োজিত সংস্থাগুলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরকে আশ্রয় দেওয়া এই জেলাটিতে সম্ভাব্য মহামারী মোকাবেলায় সম্ভাব্য প্রস্তুতির জন্য কাজ করছে।
মানবিক সহায়তায় স্বাস্থ্যসেবার নতুন নতুন প্রয়াসের মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি এবং কোভিড-১৯ আক্রান্তদের জন্য যথাযথ স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্বলিত নতুন নতুন সিভিয়ার একিউট রেস্পিরেটরি ইনফেকশন (এসএআরআই-গুরুতর তীব্র শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ) আইসোলেশন অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট সেন্টার (আইটিসি) নির্মাণ।
এছাড়া চলমান স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো নির্মাণ এবং পুনর্নির্মাণ করার কাজও চলছে।
চলতি সপ্তাহে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের সাথে সমন্বয় করে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম-জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা) দুইটি এসএআরআই আইটিসি নির্মাণ করেছে যার মাধ্যমে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হবে।
টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প ২৪ (লেদা) এবং উখিয়ার ক্যাম্প ২ (ডব্লিউ)-তে নির্মিত এই দুইটি বিশেষায়িত কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে বর্তমানে ৪৭টি এসএআরআই আইটিসি শয্যা রয়েছে। জুলাই মাসের মধ্যেই স্বাস্থ্যসেবাসহ শয্যা সংখ্যা ১১০-এ উন্নীত করা হবে। এই দুইটি কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে জেলায় আইওএম-এর সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে ভূমিকা রাখবে। এছাড়া শীঘ্রই উখিয়ার কুতুপালংয়ে ক্যাম্প ২০ (এক্সটেনশন)-এ আরো একটি ১২০-শয্যার এসএআরআই আইটিসির নির্মাণ কাজ শেষ হবে।
আইওএম কক্সবাজারের ইমার্জেন্সি হেলথ প্রোগ্রামের ডাঃ সমীর হাওলাদার বলেন, “উদ্বোধনকৃত এই ৪৭টি এসএআরআই আইটিসি শয্যা সুবিধাটি বাংলাদেশ সরকার এবং স্বাস্থ্য সেক্টরের পরিকল্পনাকৃত ২৫০-শয্যা বিশিষ্ট এসএআরআই আইটিসি-এর বৃহত্তর প্রচেষ্টার একটি সামান্য দৃশ্যমান অংশ। আইটিসি-এর পাশাপাশি আইওএম জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কন্টাক্ট ট্রেসিং (যোগাযোগের সন্ধান), হোম-বেইজ কেয়ার রেফারেল (বাড়িতে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবার রেফারেল) এবং জরুরী মুহুর্তের যোগাযোগসহ বিভিন্ন সেবার মাধ্যমে অবদান রাখছে। আমরা বিশ্বাস করি একসাথে আমরা কোভিড-১৯ মোকাবেলা করার, জনগোষ্ঠীদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা কমিয়ে এবং মৃত্যুহার রোধ করার চেষ্টা করলেই আমরা বাঁচব।“
উল্লেখিত দুইটি এসএআরআই আইটিসির পাশাপাশি এখন পর্যন্ত আইওএম-এর মাইগ্রেশন হেলথ ডিভিশন কক্সবাজারে আরো দুইটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের পুনর্গঠন করেছে। এখানে প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য রোগীদের পরবর্তী রেফারেলের জন্য সাময়িক পৃথকীকরণ সুবিধা এবং সেন্টিনাল টেস্টিং এর ব্যবস্থা রয়েছে। কক্সবাজারের চকরিয়া এবং রামু উপজেলায় সরকারের পরিচালনাধীন আইসোলেশন সেন্টারগুলোতে সহায়তার জন্য আইওএম স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সিভিল সার্জন অফিস এবং বিশ্ব ব্যাংকের সাথে সমন্বয় করছে।

কক্সবাজারে কোভিড-১৯-এর প্রভাব কমানো ও বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করার জন্য বিদ্যমান স্বাস্থ্য পরিষেবা আরো শক্তিশালী করা ও উন্নত করার কার্যক্রমের উপর সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে আইওএম। যদিও বর্ষা মৌসুমের কার্যক্রম, সুরক্ষা এবং জীবিকা সংস্থানমূলক কার্যক্রমও চলমান আছে।
গত ২৭ জুন পর্যন্ত, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোভিড-১৯ আক্রান্ত সংখ্যা ৪৭ জন। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে দেশে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ১৩৩,৯৭৮ এবং কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ১,৬৯৫ জন । মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলো কোভিড-১৯-এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে বহুমুখী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত আছে এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ও জেলার স্থানীয় জনগোষ্ঠীদের সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য অতিরিক্ত সহায়তা ও সংস্থান প্রদান করা হচ্ছে।

কক্সবাজার জেলায় আইওএম-এর অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সহায়তা:
• আইওএম কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ১০জন মেডিকেল অফিসার, একজন রেডিওলজিস্ট, একজন রেডিওগ্রাফার, একজন স্যানিটেশন অফিসার এবং ১৫জন ক্লিনার সহায়তা প্রদান করেছে এবং স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারীদের জন্য পিপিই সরবরাহ করবে।
• আইওএম বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রামু এবং চকরিয়ায় এসএআরআই আইটিসিগুলোতে শয্যা বাড়ানো এবং পরিষেবার মান উন্নয়নে সহায়তা করছে।
• উখিয়া ও টেকনাফসহ জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বিভিন্ন সহায়তা সরবরাহ করা হচ্ছে।

• আইওএম কোভিড-১৯ রোগীদের এবং তাদের পরিবারদের সাথে সমন্বয় ও সঠিকভাবে পরিচালনা করতে অ্যাম্বুলেন্স প্রেরণ এবং রেফারেল ইউনিটের নেতৃত্ব দিচ্ছে। রেফারেলকৃত কোভিড-১৯ রোগী বহন করার জন্য সাতটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়োজিত করা হয়েছে।
• অপারেশনাল চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আইওএম ২৪-ঘন্টা হটলাইন এবং ইন্টারেক্টিভ ভয়েস রেসপন্স (আইভিআর) প্রযুক্তির মাধ্যমে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত গুজব এবং ভুল তথ্য প্রতিরোধ করে জীবন রক্ষাকারী তথ্য সরবরাহ করছে।
• আইওএম ৩৫টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা চালিয়ে যাচ্ছে।
• ৪৬৫জন ব্যক্তির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি ৯৩-ইউনিটের আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণ কাজ সমাপ্তির পথে। পাশাপাশি ৫০টি আশ্রয়সেবা কার্যকর করা হয়েছে যেখানে ২৫০ জনকে কোয়ারিন্টিনে রাখা যাবে।

পাঠকের মতামত

চকরিয়ায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের হট্টগোল

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের মধ্যে হট্টগোল হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল ...