প্রকাশিত: ০৮/১১/২০১৮ ৭:৫৪ এএম

শফিক আজাদ,উখিয়া::
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলছে বনভূমি ও জোত জমি দখল-বেদখলের ঘটনা। কিছু কিছূ এনজিও ও আইএনজিও স্থানীয় প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন স্থানে বনভূমি থেকে শুরু করে জোত জমি দখলের মহোৎসবে নেমেছে। কেয়ার বাংলাদেশ নামের একটি এনজিও সংস্থা উখিয়ার থাইংখালী শফিউল্লাহ কাটা ক্যাম্প ১৬তে স্থানীয়দের জোত জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসি ও এনজিও’র মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভুক্তভোগী জমির মালিকের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কাজ বন্ধের নিদের্শ দিয়েছেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান ঘটনার সম্পর্কে জানতে চাইলে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে বলে ইউএনও’র বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা গেছে, গত বছরের ২৫ আগষ্টের পর থেকে এদেশে পালিয়ে এসে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে ৭লাখের বেশির রোহিঙ্গা রোহিঙ্গা। তৎমধ্যে বেশির ভাগ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে উখিয়ার ২০টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। আগে থেকে রয়েছে ৪লাখ। সব মিলিয়ে বর্তমানে ১১লাখ রোহিঙ্গার বসবাস উখিয়া-টেকনাফে। এসব রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবার নামে কর্মরত রয়েছে ২শতাধিক এনজিও। উক্ত এনজিও গুলোর বিরুদ্ধে শুরু থেকে নানান অভিযোগ উঠে আসলেও মানবতার খাতিরে কেউ কোন দিন প্রতিবাদ করেনি। কিন্তু এবার স্থানীয়দের খতিয়ানভুক্ত জোত জমি জবর দখল করে রোহিঙ্গাদের জন্য স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে কেয়ার বাংলাদেশ নামে একটি এনজিও সংস্থার বিরুদ্ধে। জামতলীস্থ শফিউল্যা কাটা ক্যাম্প-১৬তে এঘটনা ঘটেছে। এসময় ‘কেয়ার’ তাদের নিজস্ব ভলান্টিয়ার দিয়ে দুটি বসতঘর জোর পূর্বক উচ্ছেদ করেছে এবং জমির মালিকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
উক্ত জমির মালিক গুলজার বেগম (৩৭) এবং দিলদার বেগম (৩৫) নামের দুই বোন। ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত ওই ২ নারীর সেখানে ৪০ শতক জমি রয়েছে। আবু বক্করের ভিটা নামে পরিচিত এই জমিতে এই ২ নারী দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে। গুলজার এবং দিলদার এরা দুজনেই মূলত আবু বক্বরের ওয়ারিশদার। যার খতিয়ান নাম্বার ১৩০,পালংখালী মৌজা এবং জে.এল নাম্বার-১৩। নথি যাচাই করে দেখা গেছে, তারা সর্বশেষ গত ২০১৭ সালেও উক্ত জমির বিপরীতে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করেছে।
ভুক্তভোগী দুই বোন জানিয়েছে, কেয়ার বাংলাদেশ নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান তাদের খতিয়ানভূক্ত নিজস্ব জমিটির দিকে কুনজর দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২২ অক্টোবর জোর পূর্বক ক্ষমতা প্রদর্শন করে কেয়ার বাংলাদেশ তাদের নিজেদের ভলান্টিয়ার দিয়ে দীর্ঘদিনের দুটি বসতঘর গুড়িয়ে দিয়ে জায়গাটি তাদের দখলে নেয় এবং সেখানে তারা রোহিঙ্গাদের জন্য শেড নিমার্ণ শুরু করে। আমরা এ নিয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরীকে লিখিত অভিযোগ জানালেন ইউএনও উক্ত এনজিও সংস্থার লোকজনকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। বর্তমানে কাজ বন্ধ থাকলেও গ্রামবাসি ফুঁসে উঠেছে এনজিও’র এসব কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে।
পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, কেয়ার বাংলাদেশ স্থানীয়দের জোত জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে তাদের কর্মকর্তা লক্ষীরানীর নিকট জানতে চাইলে তিনি কোন সহোত্তর না দিয়ে উল্টো আমাকে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। তিনি বিষয়টি ইউএনওকে লিখিত আকারে অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে কেয়ার বাংলাদেশের ফিল্ড অফিসার লক্ষীরানী নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে সিআইসির সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার দিয়ে যাচ্ছে কেয়ার বাংলাদেশ। তিনি জোত জমি দখল, ইউপি চেয়ারম্যানকে হুমকি বিষয়টি অস্বীকার করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, কেয়ার বাংলাদেশ নামের একটি এনজিও সংস্থা স্থানীয়দের জোত জমিতে স্থাপনা নির্মাণ সংক্রান্ত একটি অভিযোগের ভিত্তিতে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কাজ বন্ধসহ কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সরাসরি নিদের্শনা রয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পূর্বের যে সমস্ত স্থাপনা রয়েছে তা সংস্কার, মেরামত ছাড়া নতুন করে স্থাপনা তৈরী করা যাবেনা।

পাঠকের মতামত