প্রকাশিত: ১৪/১০/২০১৮ ৯:৫১ এএম

নিউজ ডেস্ক::
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার অবহেলিত উপকূলীয় এলাকা ছেপট খালী (আংশিক) , মাদারবনিয়া এবং চোয়ান খালী থেকে মোহাং সফির বিল পর্যন্ত এলাকায় প্রায় ৬শত কি:মি: নতুন পল্লী বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন ও সংযোগের নামে স্থানীয় প্রভাবশালী দালাল চক্র নতুন সংযোগকারীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগে জানা যায়, ওইসব গ্রামে গত কিছুদিন থেকে প্রতি পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা দাবী করে। প্রতি পরিবার থেকে ২ হাজার টাকা করে। দফায় দফায় এই টাকা আদায় করা হলেও এখনো অনেক স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি। একটি গ্রামের গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রথম দফায় ১ হাজার টাকা করে ইতোমধ্যে আদায় করেছে। টাকা আদায়ের পর মিটারের সংযোগের নামে দ্বিতীয় দফায় মিটার প্রতি অতিরিক্ত আরো ১ হাজার টাকা দিতে হবে এমন শর্তারোপ করা হয়েছে বলে অভিযোগও রয়েছে। তবে অভিযুক্তরা অর্থ আদায়ের বিষয়টি এড়িয়ে যান।

জানা গেছে, প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেওয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। তারই অংশ হিসেবে নির্বাচনের আগে উখিয়া উপজেলার অবহেলিত উপকূলীয় এলাকা ছেপট খালী (আংশিক) , মাদারবনিয়া এবং চোয়ান খালী থেকে মোহাং সফির বিল পর্যন্ত নতুন পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিএনপি এবং জামায়াতের লোকজন লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করে বর্তমান সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য পরিকল্পিত ভাবে নতুন বিদ্যুৎ লাইন সংযোগে টাকা আদায়ের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। ঠিকই সরকারের যেমন দুর্নাম হচ্ছে তেমনি জনগনের কয়েক লাখ লাখ টাকা লোটপাট হচ্ছে ।

এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা গেছে, নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন দেয়ার নামে টাকা আদায়ে জড়িত রয়েছেন স্থানীয় বিএনপি এবং জামায়াতের লোকজন। তাদের এই সিন্ডিকেটের সাথে বিদ্যুৎ অফিসের কিছু কর্মকর্তাও জড়িত আছে বলে বিশ্বস্থ সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।

অভিযোগ সুত্রে আরো জানা গেছে, বিদ্যুতায়নের নামে ওইসব এলাকার মানুষের কাছ থেকে স্থানীয় মাদারবনিয়া গ্রামের মৌঃ মোহাং ইউনুচ, পিতা: মৃত মৌ: ছিদ্দিক আহমদ, মোস্তাক আহমদ পিতা: এখলাছ, মৌ: কাশেম পিতা : মৃত মৌ:এজাহার মিয়া, আবু তাহের পিতা : জমির, মুসিলম পিতা : মোহাং হাসিম, আবদুল্লাহ পিতা : হাজী আবদু জলিল। তারা ওই সব গ্রামের গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন। এলাকায় কাকে বিদ্যুৎ দেয়া যায় কাকে দেয়া যায়না সেটা তারাই ঠিক করে।’ এদের কাছে এলাকার জনগন এক প্রকার জিম্মি হয়ে আছে । তাদের হাতে টাকা তুলে না দিলে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন পাওয়া যাবে না বলে হুমকি দিয়ে তারা এই টাকা আদায় করছে। অভিযোগ সুত্রে প্রকাশ, টাকা দিতে পারেনি গ্রামের এমন অসংখ্য পরিবারকে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের বাইরে রাখা হয়েছে।

সরেজমিনে গ্রাহকরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর শতভাগ বিদ্যুতায়ন সিদ্ধান্তের আওতায় ছেপট খালী (আংশিক) , মাদারবনিয়া এবং চোয়ান খালী থেকে মোহাং সফির বিল পর্যন্ত এলাকায় বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু হয়। শতশত গ্রাহকের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিমাণে লাখ লাখ টাকা আদায় করা হয়।

এব্যাপারে উখিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অফিসের ডিজিএম এর কাছে জানতে চাইলে-তিনি টাকা নেওয়ার কথা জানেন না এবং টাকা নিতে বলেন নাই বলে জানান। এভাবে টাকা নেওয়ার নির্দেশনা বা কোন সিস্টেম আছে কিনা? জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলায় ছয়শ মিটারএলাকা নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন দেওয়ার সময় টাকা নেওয়ার কোন নির্দেশনা বা সিস্টেম নেই।

এদিকে, এলাকার ভোক্তভোগীদের কাছে জানতে চাইলে মাদার বনিয়ার স্থানীয় মেম্বার পদপ্রার্থী আবুল কাশেম জানান, ঘটনা সম্পূর্ন সত্য, তারা প্রধানমন্ত্রীর সফলতাকে ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য জনগনের কাছ থেকে হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করছে, যাতে সরকারের দুর্নাম হয়। টাকা না দিলে বিদ্যুৎ লাইন দিবে না এই কথা আমাকে ও বলেছে।

আবুল কাশেম আক্ষেপ করে আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেয়ায় গ্রামীণ জনপদের জনগন খুশি হয়েছিল। কিন্তু টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ নিতে হবে এই রকম ঘোষনাতু প্রধানমন্ত্রী দেননি। কার নির্দেশে তারা লাখ লাখ টাকা জনগণের কাছ থেকে নিচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয়। আমি ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের একজন কর্মী হিসেবে তাদের এই নিরব চাঁদাবাজির জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সাথে সাথে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক শাস্তির ব্যবস্হা করার জন্য প্রশাসনের কাছে তথা ‘ইউএনও’ উখিয়া মহোদয়সহ সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

জনগণের দেয়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার সরেজমিনে তদন্ত করতে গিয়ে চাঁদাবাজির ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় । প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়ে টাকা আদায় করার কারন জানতে চাইলে মুসলিম ( প্রকাশ ইয়াবা মুসলিম) নামের এক ব্যক্তি জানান, আমি সবার কাছ থেকে টাকা নেব এবং টাকা না দিলে বিদ্যুৎ লাইন দিতে দেব না। কেউ আমাকে কিছু করতে পারবেনা।

সম্প্রতি এই ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে স্থানীয় সংবাদ কর্মী আনোয়ার, খলিল এবং করিমকে জানে মেরে ফেলবে বলে প্রকাশ্যে হুমকি দেয় চাঁদা আদায়কারী মুসলিম ( প্রকাশ ইয়াবা মুসলিম)। তারা এব্যাপারে থানায় সাধারণ ডায়েরী করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমনকি স্থানীয় কোন জনগণ টাকা দেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করলে তাদেরকে বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।

সরেজমিনে গ্রাহকরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর শতভাগ বিদ্যুতায়ন সিদ্ধান্তের আওতায় র গ্রামে গত বছরের শেষ দিকে প্রথম দফায় ৫ কি.মি. ও দ্বিতীয় দফায় সাড়ে ৪ কি.মি. বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু হয়। মোট ৫৬৬ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরিমাণে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করা হয়।

বিদ্যুৎ লাইন সংযোগের নামে প্রকাশ্যে টাকা নেওয়ায় এলাকার জনগনের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।এই চাঁদবাজি বন্ধ করে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এলাকার জনসাধরন প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছেন।

এবিষয়ে টাকা উত্তোলনকারীদেরর ফোনে যোগাযোগ করার জন্য বার বার চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ না করায় তাদের মন্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি। সুত্র’ নিউজ কক্সবাজার

পাঠকের মতামত