প্রকাশিত: ১১/০৭/২০১৯ ৮:৩৬ এএম , আপডেট: ১১/০৭/২০১৯ ৮:৩৯ এএম

ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বাদ দিয়ে চার্জশিট দেওয়া মামলা ফের তদন্ত করতে আদালতে আবেদন করেছে পুলিশ। গত ১৭ মে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বরাবর এ আবেদন জমা দেন বায়েজিদ বোস্তামি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ হোসাইন।

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে মামলাটি বিচারের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর হওয়ায় সেই আবেদন মহানগর দায়রা জজ আদালতে জমা দেয় প্রসিকিউশন শাখা।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ মামলার শুনানির তারিখ ধার্য করা আছে।

মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মো. ফখরুদ্দীন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বায়েজিদ বোস্তামি থানায় দায়ের হওয়া একটি মাদকের মামলায় ফের তদন্ত করতে আবেদন করেছেন বায়েজিদ বোস্তামি থানার এসআই মোহাম্মদ হোসাইন। বৃহস্পতিবার এ আবেদনের শুনানি রয়েছে।

এসআই মোহাম্মদ হোসাইন আদালতে জমা দেওয়া তার আবেদনে উল্লেখ করেন, গত ৭ এপ্রিল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকমে প্রকাশিত ইয়াবার গডফাদারকে বাদ দিয়ে পুলিশের চার্জশিট সংক্রান্ত সংবাদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলাটি সিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটি এসবি) মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদকে দিয়ে অনুসন্ধান করানো হয়। অনুসন্ধান শেষে তিনি (মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদ) তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন- মামলার পূর্ববর্তী তদন্তকারী অফিসার মামলাটি যথাযথ সাক্ষ্য-প্রমাণ ও সুষ্ঠ তদন্ত না করে দায়সারাভাবে তদন্ত শেষে মূল আসামিদের বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। সিএমপি কমিশনার মামলাটি আরও নিবিড়, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিতে আদেশ দেন।

২০১৮ সালের ৬ অক্টোবর বায়েজিদ বোস্তামি থানার কুয়াইশ-অক্সিজেন রোডে অনন্যা আবাসিকের চৌরাস্তার মোড় থেকে ৭ হাজার ৫০০ পিস ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন আবদুল গফুর নামে এক ইয়াবা ব্যবসায়ী।

গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে রেদোয়ানসহ আরও তিনজনের নাম প্রকাশ করেন মো. আবদুল গফুর। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বায়েজিদ বোস্তামি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) উৎফল চক্রবর্তী আসামির মোবাইল ফোনের সিডিআর বিশ্লেষণে রেদোয়ানের সঙ্গে আসামি গফুরের কথোপকথন হয়নি এমন অযুহাতে ‘গডফাদার’ রেদোয়ানসহ অন্যদের বাদ দিয়ে মামলার চার্জশিট দিয়েছেন।

চার্জশিটে শুধু মো. আবদুল গফুরকে একমাত্র অভিযুক্ত করা হয়েছে। আবদুল গফুর (৫৮) কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার পালংখালী বালুখালীছড়া এলাকার আলী হোসেনের ছেলে। রেদোয়ান প্রকাশ মো. রেজওয়ান প্রকাশ প্রকাশ জুবায়ের (৫৫) চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার মোজাফফর নগর এলাকার মো. ছিদ্দিকের ছেলে।

আবদুল গফুর প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে প্রকাশ করেছিলেন মো. মীর কাশেম (৪১) ও মো. শরীফ (৪০) এর নাম। মীর কাশেম কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার দক্ষিণ খুনিয়াপালং এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে এবং শরীফ কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সাবরাং জিনাপাড়ার লাল মিয়ার ছেলে।

তিনজনকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বায়েজিদ বোস্তামি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) উৎফল চক্রবর্তী চার্জশিটে আসামির মোবাইল ফোনের সিডিআর বিশ্লেষণে রেদোয়ানসহ অন্যদের সঙ্গে আসামি গফুরের কথোপকথন হয়নি এমনটা উল্লেখ করেন এবং তাদের অপরাধের সত্যতা পাওয়া না যাওয়ায় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদনও জানান।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই উৎফল চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেছিলেন, ‘তদন্তে গফুর ছাড়া অন্য আসামিদের জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি তাই তাদের বাদ দিয়ে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।’

এ নিয়ে বাংলানিউজে গত গত ৭ এপ্রিল ‘ইয়াবার গডফাদারকে বাদ দিয়ে পুলিশের চার্জশিট’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য সিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটি এসবি) মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদকে দায়িত্ব দেন। অনুসন্ধানে বাংলানিউজে প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা পান মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদ। পরে এ ঘটনায় এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই উৎফল চক্রবর্তীকে বায়েজিদ বোস্তামি থানা থেকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করতে আদেশ দেন সিএমপি কমিশনার।

এদিকে এ মামলা থেকে বাদ দেওয়া টেকনাফের সাবরাং এলাকার মো. শরীফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তদন্ত কর্মকর্তাকে টাকা দিয়েছিলেন বলে বাংলানিউজের সঙ্গে কথোপকথনে স্বীকার করেন তিনি।

মো. শরীফ দাবি করেন, তাকে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। যেদিন এ মামলায় কোতোয়ালী থানার দেওয়ানবাজার এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়েছিল সেদিন এসআই উৎফল চক্রবর্তীকে টাকা দেন। তার সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল-তাকে (শরীফ) ছেড়ে দিবে কিন্তু পরে এ মামলায় তাকে চালান দেওয়া হয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি জামিনে মুক্তি পান।

গত বছর নগরের হালিশহরে ১৩ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধারের পর আসামিদের জবানবন্দিতে প্রথমবারের মতো জানা যায় ‘ইয়াবার গডফাদার’ রেদোয়ান প্রকাশ মো. রেজওয়ান প্রকাশ প্রকাশ জুবায়েরের নাম। একই বছরের ৭ নভেম্বর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে মালয়েশিয়া পালিয়ে যাওয়ার সময় রেদোয়ান প্রকাশ মো. রেজওয়ান প্রকাশ প্রকাশ জুবায়েরকে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। পরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্যরা গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন। পরে বায়েজিদ বোস্তামি থানার মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

রেদোয়ান কিছুদিন আগে ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত দেশের শীর্ষ স্থানীয় ইয়াবা ব্যবসায়ী টেকনাফের হাজী সাইফুল করিমের অন্যতম সহযোগী বলে জানায় পুলিশ।

সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এ মামলার পূর্বের তদন্ত কর্মকর্তাকে পুলিশ লাইন্সে ক্লোজড করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত