প্রকাশিত: ২৫/০৩/২০১৯ ৭:৩৫ এএম

হুমায়ুন কবির জুশান ,উখিয়া
পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে গতকাল রবিবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা উখিয়া উপজেলায় ভোট হয়েছে। সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত এই উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়। চলতি মাসের গত ১০ ও ১৮ মার্চ প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের মতো এই ধাপেও ভোটারদের তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। রাজাপালং ইউনিয়নের উখিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সারা দিনে পড়ে মাত্র ৪৫ ভোট। উখিয়া উপজেলার প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। বেশিরভাগ কেন্দ্রই ছিল প্রায় ফাঁকা। বেলা সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত রত্না পালং উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩ ও ৫ নং বুথে ১ টি ভোটও পড়েনি। ঐ কেন্দ্রে ১১ টা ৪৫ মিনিটের সময় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গির আলমের উপস্থিতিতে ব্যালেট পেপারে জোর পূর্বক সিল মারার চেষ্টা করলে দায়িত্বরত শিক্ষকরা প্রতিবাদ জানায়। এক পর্যায়ে তারা অসহায় অবস্থায় অবরোদ্ধ হয়ে পড়েন। সাংবাদিকরা খবর পেয়ে ১১ টা ৫০ মিনিটে শিক্ষকদের অবরোদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। প্রিসাইডিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের সামনে দায়িত্বরত শিক্ষক হারুন উর রশিদ, নুরুল আলম, মুজিবুল হক, খোরশেদ আলম ও রোকেয়া সোলতানা ভোট জালিয়াতির প্রতিবাদে সমস্ত শিক্ষকরা প্রিসাইডিং অফিসার মোহাম্মদ এনামুল হকের কার্যালয়ে এসে স্ব স্ব ব্যালেট বাক্স জমা দিয়ে নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে ভোট গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন। সাংবাদিকদের উপস্থিতি ও শিক্ষকদের প্রতিবাদের মুখে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এ সময় বেলা ১২ টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিট্রেট সেতু ঘটনাস্থলে পৌছেন। পরে নির্বাহী ম্যাজিট্রেট সেতু নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করায় শিক্ষকরা বুথে গিয়ে পূণরায় ভোট গ্রহণ শুরু করেন। প্রিসাইডিং অফিসার মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, আমরা শিক্ষকরা নৈতিকতা বিসর্জন দিতে পারি না।এখানকার দায়িত্বরত সকল শিক্ষক ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করায় ও সাংবাদিকদের উপস্থিতি এবং নির্বাহী ম্যাজিট্রেটের আসার খবর পেয়ে দুর্বৃত্তরা পালাতে বাধ্য হয়।উখিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজাপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাজাপালং ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসা,রত্না পালং উচ্চ বিদ্যালয় উখিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়, গয়ালমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে পরিদর্শন করে কোথাও ভোটারদের লাইনে দাড়িঁয়ে ভোট দিতে দেখা যায়নি। বিচ্ছিন্নভাবে দু-একজন করে লাইনে না দাঁড়িয়ে সোজা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে দেখা গেছে। পরে বালুখালী কাশেমিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়েও ভোটারদের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। রুমখা পালং আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোটারদের কোনো লাইন ছিল না। কেন্দ্রে ২ হাজার ৯ শ ৪৮ ভোটের মধ্যে বেলা ১১ টা পর্যন্ত ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে প্রিসাইডিং অফিসার মৌলানা ফরিদ জানিয়েছেন। তবে ঐ কেন্দ্রে ১১ টার সময়ে ভোট দিতে আসা আহমদ কবির নামে এক বয়স্ক ভোটারকে ব্যালেট পেপার নেই, ৩ টায় তাকে ভোট দিতে আসতে বলে তাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। এ ব্যাপারে প্রিসাইডিং অফিসার বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেন। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই নগন্য। ভালুকিয়া পালং উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটার নুরুল আলম বলেন, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই কেন্দ্রে যেভাবে একতরফা নির্বাচন হয়েছে, আমাদের অনেককেই ভোট দিতে দেয়নি। এরপর তো আর ভোট দিতে মানুষের আগ্রহ থাকার কথা নয়। গেল কয়েক মাসের মধ্যে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের কোনো নির্বাচনেই কোনো ধরণের প্রতিদ্বন্ধিতা ছিল না। উপরন্তু একতরফা নির্বাচন, কারচুপি, ভোটের আগের রাতে সিল মেরে ব্যালেট বাক্স ভরে রাখাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে ভোটারদের মধ্যে। ভোটারবিহীন ভোটকেন্দ্র যেন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হতে যাচ্ছে। এম গফুর উদ্দিন বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আগেই নির্বাচিত হওয়ায় ভোটার উপস্থিতি কম। উখিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক ভোটজালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব আলম মাহবুব, এ আর জিহান চৌধুরী ও মোহাম্মদ রাশেল ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।ভোটের দুদিন আগে আরেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নং যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা এবং এরই কিছুদিন আগে আরেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রুহুল আমিন মেম্বার ভোট বর্জনের ঘোষনা দিয়েছেন। উখিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বেসরকারিভাবে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচিত হয়েছেন।

পাঠকের মতামত

চকরিয়ায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের হট্টগোল

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের মধ্যে হট্টগোল হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল ...