প্রকাশিত: ১৬/০৮/২০১৮ ১০:৫২ পিএম , আপডেট: ১৬/০৮/২০১৮ ১১:১৮ পিএম

ক্রাইম ওয়াচ :
দেশের সর্ব দক্ষিন সীমান্ত জনপদ টেকনাফে ইয়াবা ডন সিদ্দিক পরিবারের জমজমাট ইয়াবা বানিজ্য থেমে নেই।দেশ ব্যাপী ইয়াবা পাচারে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে পাচার কাজে প্রাইভেট গাড়ীতে সরকারী লগো ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে এসিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।গ্রেফতার এড়াতে পরিবারিক সিন্ডিকেটটি আত্বগুপনে থাকলেও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সিদ্দিকের পুত্র রবিউল।এদের বিরুদ্ধে হত্যা,ভূমিদস্যুতা,অগ্নি সংযোগ সহ বিস্তর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ রয়েছে।স্থানীয় তৃতীয় সারির এক আওয়ামী নেতার আশ্রয় পশ্রয়ে এরা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।মোস্টওয়ান্টেড চক্রটি কে পুলিশ গ্রফতারে তৎপর রয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছেন।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের নজিরের পুত্র ছিদ্দিক,স্ত্রী ইয়াবা সুন্দরী রশিদা ও ছিদ্দিকের পুত্র ফরিদ আলম,রবিউল আলম এবং খলিলের পুত্র সাবেক ইউপি মেম্বার হামজালালের ছোট ভাই বাহাদুর,ছিদ্দিকের ভাই জালালের পুত্র জসিম নেতৃত্বে রমরমা ইয়াবা ব্যবসা চলছে।এচক্রটি এতোটা শক্তিশালী যে এদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচারতো দূরের কথা ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস রাখেনা।অনুসন্ধানে জানাগেছে,বিগত ২০১৫সালে ১৪ সেপ্টেম্বর নাজির পাড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ একটি জমি সংক্রান্ত মামুলি ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিবালোকে আজিজুল হক মার্কিন নামক এক যুবলীগ নেতা কে হত্যার মধ্য দিয়ে প্রশাসন ও মিডিয়ার আলোচনায় আসে সর্বপ্রথম।এর পর থেকেই চক্রটি পালিয়ে ঢাকা অবস্থান করার তথ্য উঠে এসেছে।পরর্তিতে প্রতিপক্ষ কে ঘায়েল করতে গত ১০ আগষ্ট পরিত্যাক্ত ভূতুড়ে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে সাজানো মামলা দায়েরের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মামলার বাদী পক্ষ।

কে এই ছিদ্দিক, রশিদা, ফরিদ, রবিউল,বাহাদুর:
অনুসন্ধানে জানাগেছে,বিগত সময়ে এজাহারর কোং ট্রলার চালক হিসেবে চাকুরী করতো ছিদ্দিক।সাগর পথে টেকনাফ থেকে লবন বোঝাই ট্রলার ঢাকা নারায়নগঞ্জ পৌছিয়ে দেওয়া ছিলো তার কাজ।কিন্তু অতিলোভে ট্রলারে করে চোরাচালান ব্যবসায় জড়িয়ে পড়লে ট্রলার মালিক পক্ষ ছিদ্দিক উরফে ব্ল্যাক ছিদ্দিক কে চাকুরীচ্যুত করে।এর পর থেকেই পরবর্তিতে স্থানীয় আওয়ামী নেতা হামজালালের হাত ধরে যানবাহন ব্যবসা শুরু করে।উক্ত ব্যবসার দায়িত্ব তুলে দেয় তার বড় পুত্র ফরিদ আলমের হাতে।আনুমানিক ২০০৮ সালের দিকে পিতা-পুত্র মিলে গাড়িতে বিশেষ কায়দায় টেকনাফ থেকে কক্সবাজার- চট্টগ্রাম-ঢাকা ইয়াবাপাচার শুরু করে।বছর দু’এক না যেতেই পিতা পুত্রের ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে তার শালক বাহাদুর।টেকনাফ থেকে কখনো নৌপথে কখনো সড়ক পথে আবার কখনো আকাশ পথে চক্রটি ইয়াবার চালান ঢাকা পাঠালে তা সরাসরি বাহাদুর তত্বাবধান করতো বলে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানাগেছে।বাহাদুর এক সময় চাদের গাড়ি (জীপ)ড্রাইভার ছিলো।তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে বছর তিনেক আগে ইয়াবার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্কুর এবং আবুল হোসেন নামের দুই জনকে কে হত্যা করে ভয়ংকর সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।এই ঘটনায় পলাতক হয়ে ইয়াবাকারবারী বাহাদুর সিলেট,ঢাকা ফার্মগেইট,মগবাজার,মহাখালী,মিরপুর শেওড়া পাড়া এলাকায় ইয়াবা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে রাজার হালে বসবাস শুরু করে বলে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছে।অনুসন্ধানে জানা গেছে, দ্বীর্ঘ দিন আত্বগুপনে থাকার পর বছর খানেক আগে বাহাদুর এলাকায় ফিরে এসে হামজালালের ছত্রছায়ায় অবস্থান করতে থাকে।চলমান ইয়াবা বিরোধী অভিযান জোরদার হলে ফের আত্বগুপনে চলে যায়।এচক্রটির ঢাকা,চট্টগ্রাম,কক্সবাজার, টেকনাফ সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শত কোটি টাকার নামে বেনামে বাড়ি,গাড়ি রয়েছে বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।অদৃশ্য কারনে বাহদুর ও তার ভাগিনা রবিউল পারপেয়ে গেলেও দেশের বিভিন্ন থানায় সিদ্দিকের-পুত্র-স্ত্রীর বিরুদ্ধে হত্যা,ভূমি দস্যুতা,জবর দখল,মানব পাচার সহ অন্তত ডজন মামলার তথ্য জানিয়েছে পুলিশ সূত্র।

চলতি বছর ২৫ মার্চ প্রাইভেট গাড়িতে সরকারী লগো ব্যবহার করে ইয়াবা পাচার কালীন চট্টগ্রাম ডিবি পুলিশের হাতে ৫০ হাজার ইয়াবা সহ আটক হয় জসিম নামের এক যুবক।সে ছিদ্দিকের ভাই জলালের পুত্র।আদালতে ১৬৪ ধারা জবান বন্দি মতে সিদ্দিকের পুত্র রবিউলের নাম উঠে আসে প্রশাসনের তালিকায়।এর পর থেকে রবিউল আত্বগুপনে চলে যায়।এর বিরুদ্ধে ছাত্রত্ব পুঁজি করে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে অনেক আগে থেকেই।কয়েকটি শীর্ষ স্থানীয় জাতীয় দৈনিকের বরাতে জানাগেছে এদের নিয়ন্ত্রনে দেশের বিভিন্ন স্থানে শ’খানেক ইয়াবা বহনকারী নারী-পুরুষ সদস্য রয়েছে।ছিদ্দিকের স্ত্রী ইয়াবা সুন্দরী রশিদা,পুত্র ফরিদসহ বেশ কয়েক দফা আইনপ্র‍য়োগকারী সংস্থার হাতে ইয়ায়াবা সহ আটক হলেও কালো টাকা ঠেলায় উচ্চ আদালত থেকে আইনের ফাঁক গলে বেড়িয়ে এসে আবার ব্যবসা শুরু করে।

অপরদিকে স্থানীয় সুত্র মতে,হামজালালের আওয়ামী রাজনীতির সাইনবোর্ড ব্যবহার করে তার ছত্র ছায়ায় পারিবারিক সিন্ডিকেট টি সরাসরি ইয়াবা ও মানব পাচারে জড়িত থাকলেও হামজালাল ছিলো কৌশলী গভীর জলের মাছ।এদিকে হামজালাল যতোই সুফিয়ানা বেশ ধরে চলার চেষ্টা করছে সে ততোটা সুফি নয় বলে তার বিরুদ্ধে ভয়ংকর কিছু তথ্য উঠে এসেছে অনুসন্ধানে।গত ২০১৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী দুই হাজার পিস ইয়াবাসহ লোহাগাড়া থানার চুনতি এলাকায় পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন তিনি।

এবিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার ওসি বাবু রঞ্জিত বডুয়া ক্রাইম ওয়াচকে জানান,এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ইয়াবা সহ বিভিন্ন অপরাধে বেশ কিছু মামলা রয়েছে তৎমধ্যে কয়েকটি মামলায় জামিনে রয়েছে।তবে এরা পলাতক থাকার কারনে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছেনা।পুলিশ এসব ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।সঠিক তথ্য পেলে গ্রেফতার করা হবে,এব্যাপারে সকলের সহযোগীতা প্র‍য়োজন বলে জানান।

পাঠকের মতামত