প্রকাশিত: ০৫/১০/২০১৮ ১০:১৪ এএম

নিউজ ডেস্ক::
গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় মিয়ানমার থেকে অবাধে আসছে ইয়াবা। গডফাদারদের হাত নেই এমন কোনো জায়গা নেই। প্রশাসন ও পুলিশের একশ্রেণির কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের দহরম-মহরম সম্পর্ক। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তারা থাকেন।

অনেকে শুধু নামেই রাজনীতিবিদ, তাদের মূল ব্যবসা ইয়াবা। অঢেল ক্ষমতার অধিকারী হওয়ায় সাঁড়াশি অভিযানেও ইয়াবার গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকেছেন। তবে এবার অনেকটা নতুন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন গডফাদাররা। সরকারের হাইকমান্ডের কাছে জমা দেওয়া তালিকায় থাকা এক গডফাদার ইতোমধ্যে তালিকা থেকে তার নাম বাদ দিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আবেদন করেছেন।

ওই গডফাদারের নাম নুরুল আলম। কক্সবাজার জেলার টেকনাফের মৃত শফি মেম্বারের ছেলে নুরুল আলম তালিকায় ৪২ নম্বরে আছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অপর একটি তালিকায় তার নাম ৮৯৮ নম্বরে রয়েছে। আরেকটি গোয়েন্দা সংস্থাসহ সবার তালিকায় তার নাম রয়েছে বলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।

তবে নুরুল আলমের আবেদনের বিষয়টি তদন্ত করার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (কারা অণুবিভাগ) আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও গোয়েন্দা), পুলিশ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধি। কমিটিকে বিষয়টি তদন্তপূর্বক আগামী ৯ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারের পাঁচটি সংস্থা মাদক ব্যবসায়ীদের যে তালিকা জমা দিয়েছে তা পর্যালোচনা করে ১৪ হাজার মাদক ব্যবসায়ীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এরমধ্যে সারাদেশে মাদকের গডফাদার রয়েছেন ৯০০ জন। শুধু রাজধানীতে আছেন ৩৭ গডফাদার। টেকনাফে ৫৪ গডফাদার এবং ১৭৫ জন মাদকের বড় ব্যবসায়ী আছেন।

মূলত টেকনাফের ৫৪ গডফাদারই মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আনার বিষয়টি দেখভাল করে থাকেন। দেশব্যাপী ৯০ ভাগ ইয়াবা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করেন এই ৫৪ গডফাদার। দেশব্যাপী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকলেও গডফাদারদের কেউ ধরতে পারছে না।

আর এত কঠোর অভিযানের মধ্যেও ইয়াবা আসা বন্ধ হয়নি, কারণ গডফাদাররা আছেন বহাল তবিয়তে। এ পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, এত বড় অভিযানে তাহলে কারা ধরা পড়ছেন? মূলত মাঠে যারা থাকেন তারাই ধরা পড়ছেন।

সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, দেশে এখন মাদকসেবীর সংখ্যা কমবেশি ৭০ লাখ। তাদের অধিকাংশই ইয়াবায় আসক্ত। জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সংস্থা ইউএনওডিসির মত অনুযায়ী, মাদক উদ্ধার হয় সাধারণত মোট ব্যবহারের ১০ শতাংশের মতো।

সেই হিসাবে বছরে শুধু ইয়াবা বড়ি বিক্রি হয় ৪০ কোটির বেশি, যার বাজারমূল্য প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা (প্রতিটি বড়ি গড়ে দেড়শ টাকা দরে)। যদিও কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের হিসাবে বছরে দেশে ইয়াবা বিক্রি হয় ১০ হাজার কোটি টাকার।

পুলিশ, র?্যাব ও বিজিবির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া যায়, এই বিপুল টাকার শক্তিতেই ইয়াবা ব্যবসা হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক প্রতিরোধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করলেও এখনো মাদকের রাশ টেনে ধরা যায়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেকনাফ-কক্সবাজারের কিছু স্থানীয় ব্যক্তির কাছে ইয়াবা আর দশটা ব্যবসার মতোই স্বাভাবিক রোজগারের উপায়। এই ব্যবসা করে কেউ কেউ টেকনাফের বিভিন্ন পাড়ায় আলিশান বাড়ি করেছেন। ব্যবহার করছেন পাজেরো, প্রাডোর মতো দামি গাড়ি। অথচ তারা একসময় দরিদ্র জেলে কিংবা সাধারণ লবণচাষি ছিলেন।

এখন বিপুল অর্থ রাজনীতি, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী একশ্রেণির নেতার মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, এত অভিযানের পরেও নাফ নদী ও সাগরপথে এখনো ইয়াবার চালান আসছে।

টেকনাফ থেকেই তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। একজন কর্মকর্তা বলেন, সীমান্তে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রতিদিন ছোট-বড় ইয়াবার চালান ধরছে। কিন্তু গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় ইয়াবা পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না।

গত ৪ মে থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশব্যাপী র্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে ৬ হাজার ২৩০ জন। ২৯২ কোটি ৮৫ লাখ টাকার মাদক উদ্ধার ও র্যাবের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে ৮২ জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।

র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, র্যাবের অভিযানের ফলে টেকনাফের গডফাদারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার গডফাদাররা গা-ঢাকা দিয়েছে। তবে তাদের অবস্থান ও গ্রেফতারের কার্যক্রম চলছে। গডফাদার যেই হোক মাদক ব্যবসায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে তিনি জানান।
সুত্র : কক্সবাংলা

পাঠকের মতামত