প্রকাশিত: ১৩/১০/২০১৮ ১০:১১ এএম

ডেস্ক রিপোর্ট::
আলমগীর হোসেন। বয়স ৫৭ বছর। রাজধানীর খিলগাঁও সিপাহীবাগের এই আলমগীর ইয়াবা জগতে পরিচিত ‘দরবেশ বাবা’ নামে। তার অধীনে অন্তত এক ডজন ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছে। তারাও তাকে সম্বোধন করে ‘দরবেশ বাবা’ বলে। এই দরবেশ বাবার গডফাদারের নাম আবুল কালাম আজাদ। বাসা উত্তর মুগদার ওয়াসা রোডে। ঢাকায় ইয়াবার অন্যতম ডিলার তিনি। তার অধীনে রয়েছে ১০-১২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী। আলমগীরকে তিনিও দরবেশ বাবা বলে ডাকেন। কালাম ও আলমগীর খিলগাঁও, রামপুরা, সবুজবাগ, মুগদা, শান্তিনগর, মৌচাক ও মালিবাগ এলাকায় ইয়াবার একটি বড় চক্র গড়ে তোলেন ২২-২৪ পাইকার নিয়ে। খুব চতুরতার সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ইয়াবা সরবরাহ করে ব্যবসা করে আসছিলেন দু’জন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) হাতে কালাম, আলমগীরসহ তাদের চক্রের আটজন গ্রেফতার হয়েছেন। গত পাঁচ বছর ধরে তারা এ ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (উত্তর) মোহাম্মদ খোরশিদ আলম সমকালকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ চক্রকে ধরার জন্য ফাঁদ পাতা হচ্ছিল। তারা এমন কৌশলে ইয়াবা একজন আরেকজনের কাছে পৌঁছিয়ে দিতেন যে তাদের ধরা কঠিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া তারা কাটআউট পদ্ধতিতে ইয়াবা ব্যবসা করেন। আলমগীর ও কালাম বিশ্বস্ত ছাড়া সবার কাছে হাজির হতেন না। বৃহস্পতিবার রাতে কালাম, আলমগীরসহ তাদের চক্রের সাতজনকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় ১১ হাজার পিস ইয়াবা। ইয়াবা বহনে ব্যবহূত একটি মোটরসাইকেলও (ঢাকা মেট্রো ল-৩৬-০৬৬৩) জব্দ করা হয়েছে। এই চক্রের আরও একাধিক সদস্য রয়েছে।

গত ৩ মে র‌্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানান। দেশব্যাপী মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালাতে নির্দেশ দেন তিনি। এরপর থেকেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর দেশব্যাপী মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে নামে। তবুও মাদক কেনাবেচা বন্ধ হয়নি। কারবারিরা নিত্যনতুন কৌশলে জঙ্গিদের মতো কাটআউট পদ্ধতিতে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

ডিএনসি সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কালাম ও আলমগীরের ইয়াবা চক্রের অন্যতম সদস্য বাবু ও শাহীনকে শান্তিনগর থেকে গ্রেফতার করে ডিএনসি ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলের একটি দল। এ দলের নেতৃত্ব দেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ খোরশিদ আলম। বাবু ও শাহীন শান্তিনগর এলাকায় ইয়াবা বিক্রি করে। তারা খুচরা বিক্রেতা। ইয়াবার ডিলার বা পাইকারি ব্যবসায়ীকে তারা চেনে না। ডিএনসির কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তারা ইয়াবা ব্যবসায়ী পিন্টু ও দেলোয়ারের মাধ্যমে ইয়াবা সংগ্রহের কথা জানায়। তাদের দেওয়া তথ্যে শান্তিনগর থেকে পিন্টু ও দেলোয়ারকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর মালিবাগ চৌধুরীপাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয় রাকিব নামে আরেক ইয়াবা ব্যবসায়ীকে। রাকিবের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে ডিএনসির এ দলটি অভিযান চালায় খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগে। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় আলমগীর ওরফে দরবেশ বাবাকে। আলমগীর ডিএনসিকে তথ্য দেয় তার গডফাদার আবুল কালাম আজাদ সম্পর্কে। বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর মুগদার ওয়াসা রোডের বাসার কাছ থেকে গ্রেফতারের সময় কালাম ‘নাটক’ শুরু করেন। অজ্ঞান হয়ে পড়ার ভান করতে থাকেন। কোনোভাবেই ইয়াবা ব্যবসার কথা বলতে রাজি হননি তিনি। এমনকি চ্যালেঞ্জও করেন আভিযানিক দলের সঙ্গে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ইয়াবা ব্যবসার কথা স্বীকার করেন। পরে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে নয় হাজার পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। এর আগে গ্রেফতারদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় দুই হাজার পিস ইয়াবা।

মোহাম্মদ খোরশিদ আলম জানান, গতকাল এই চক্রের আরও একজনকে রামপুরা থেকে দুই হাজার চারশ’ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার আবদুল মান্নান সাবেক সেনাসদস্য। করপোরাল পদে কর্মরত ছিল সে।

পাঠকের মতামত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ

‘ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরনি বেহেশতী/দুষমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তি’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ...