প্রকাশিত: ১৩/০২/২০১৮ ৯:১১ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৬:৩৯ এএম

মোঃ আরিফ উল্লাহ
বিয়ে মুসলিম নর – নারীর ওপর ক্ষেত্র ভেদে ফরয , সুন্নত ও হারাম করা হয়েছে। আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও বিবাহ সম্পন্ন হচ্ছে কিন্তু প্রশ্ন হল এ বিয়েতে কতখানি ইসলা্মী সারিয়াহ ও দেশীয় আইন কে অনুসরণ করা হচ্ছে? আমাদের সমাজে বিয়ে ব্যবস্থা হচ্ছে পরিবারের কর্তা কর্তৃক নির্ধারিত বা পছন্দের ছেলে বা মেয়েকে জোরপূর্বক গ্রহণ করিয়ে দেয়া বা তার ছেলে মেয়ের ওপর তার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া, যেখানে ছেলে মেয়েদের মতামত কে গুরুত্ব দেয়া হয়না। ইসলামে বিবাহ হচ্ছে মুসলিম আইন বা ইসলামের রীতি-নিতি অনুসরণ করে একজন ছেলে ও একজন মেয়ে একসাথে বসবাস করার বৈধতা। আর আমাদের দেশীয় আইন মতে বিবাহ হচ্ছে এক ধরনের চুক্তি যা একজন সাবালক নারী ও পুরুষকে একই সাথে বসবাস ও সন্তান জন্মদানের সামাজিক বৈধতা দেয়।
ইসলামে জোরপূর্বক বিবাহ:-
ইসলামে জোরপূর্বক বিবাহকে নিষেধ করা হইয়েছে। সহি বুখারী, মুসলিম, মিশকাত শরিফের হা / ৩১২৬ অনুসারে বিবাহের চারটি শর্তের কথা বলা হইয়েছে তা হল, * পরস্পর বিবাহ বৈধ এমন পাত্র পাত্রী নির্বাচন করা। * পাত্র – পাত্রী উভয়ের সম্মতি নেয়া। * মেয়ের ওলী থাকা। * দুজন ন্যায়নিষ্ঠ সাক্ষী থাকা। বর্ণিত চারটি শর্তের কোনোএক শর্ত যদি মানা না হয় তবে বিয়ে শুদ্ধ হবেনা,[ আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/ ৩১৩১] । আমাদের সমাজে পিতা ই বিবাহের সব কিছু দেখেন এবং তার ইচ্ছানুযায়ী বিবাহ সম্পাদন হইয়ে থাকে, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি বেশি লক্ষ্য করা যায়। বাবা নিজেই মেয়ের সম্মতি দিয়ে দেয় যেখানে বিয়ের মূল নিয়ামক হল বর ও কনে, তাদেরকে ই সারা জীবন একসাথে অতিবাহিত করতে হবে কিন্তু তাদের মতামত পিতার নিকট গ্রহণযোগ্যতা তেমন পেয়ে থাকেনা। যার কারনে বিবাহ বিচ্ছেদ হইয়ে থাকে সেই সাথে ২টি জীবনে নেমে আসে কালো অধ্যায় এবং সইতে হয় নানা অত্যাচার, কেও এ জীবন যুদ্ধে বিজয়ী হয় আর কেও বেছে নেয় আত্নহত্যার পথ। এ বিষয়ে আল্লাহ সুবহানাহু অ’ তায়ালা সূরা নিসার আয়াত নং ১৯, তে বলেন, ‘ হে ঈমাণদারগণ! বলপূর্বক নারীদেরকে উত্তরাধিকারে গ্রহন করা তোমাদের জন্যে হালাল নয় এবং তাদেরকে আটক রেখো না যাতে তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ তার কিয়দংশ নিয়ে নাও; কিন্তু তারা যদি কোন প্রকাশ্য অশ্লীলতা করে! নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ, অনেক কল্যাণ রেখেছেন।
শুধু তাই নয়, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) বলেন, বিবাহিতা মেয়েকে তার পরামর্শ ছাড়া বিবাহ দেয়া যাবে না এবং কুমারী মেয়েকে তার অনুমতি ছাড়া বিবাহ দেয়া যাবেনা। ছাহাবীগণ জানতে চান তার অনুমতি কিভাবে হবে? উত্তরে তিনি বললেন চুপ থাকাই হচ্ছে তার অনুমতি। [বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩১২৬.]
অন্য আরেক হাদিসে বলা উল্লেখ আছে, যুবতী – কুমারী মেয়ের বিবাহের ব্যাপারে পিতাকে তার অনুমতি নিতে হবে, আর অনুমতি হচ্ছে চুপ থাকা। [মিশকাত, মুসলিম হা/৩১২৭] যেখানে পিতাকে মাতার উপরের আসন দিয়েছেন সেখানে আমাদের সামাজিক অবস্থা সম্পূর্ণ উল্টো। এখানে অধিকাংশ সময় পিতা অনুমতি নেয়ার বিপরীতে তার ওপর নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়। যদি কেও তার মেয়েকে জোর করে বিবাহ দেয় তাহলে সে মেয়ে বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, ও বুবূগুল মারাম এর হা/ ৯৮৮ মতে সে ইচ্ছে করলে বিয়ে ভেংগে দিতে পারে।
সুতরাং সম্মতি না নিয়ে কোনো ছেলে বা মেয়েকে বিয়ে দিলে তা শুদ্ধ হবেনা আর কনে চাইলে এ বিয়ে ভেংগে ফেলতে পারে।
অন্যদিকে আইনের চোখে সম্মতি ছাড়া বা জোরপূর্বক বিবাহ একটি দন্ডনীয় অপরাধ। দন্ডবিধি, ১৮৬০ ধারা ৩৬৬: যে ব্যক্তি কোন নারীকে তার ইচ্ছার বিরু্দ্ধে – কোন ব্যক্তিকে বিয়ে করতে বাধ্য করা যেতে পারে এ রূপ অভিপ্রায়ে বা তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তিকে বিয়ে করতে বাধ্য করার সম্ভাবনা রয়েছে জেনে কিংবা তাকে অবৈধ যৌন সহবাস করতে বাধ্য বা প্রলুব্ধ করার উদ্দেশ্যে অথবা তাকে অবৈধ যৌন সহবাস করতে বাধ্য বা প্রলুব্ধ করার সম্ভাবনা রয়েছে জেনে অপহরণ বা হরণ করে সে ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবে। এবং যে ব্যক্তি কোন নারীকে এই বিধিতে বর্ণিত অপরাধমূলক ভীতিপ্রদর্শন বা ক্ষমতার অপব্যবহারের সাহায্যে বা বাধ্যবাধকতার অন্য কোন উপায়ে, অন্য কোন ব্যক্তির সাথে অবৈধ যৌন সহবাস করতে বাধ্য বা প্রলুব্ধ করা যেতে পারে এই উদ্দেশ্যে অথবা তাকে অন্য কোন ব্যক্তির সাথে অবৈধ যৌন সহবাস করতে বাধ্য বা প্রলুব্ধ করা যেতে পারে জেনে তাকে কোন স্থান হতে গমন করতে প্রলুব্ধ করে সে ব্যক্তিও একই দন্ডে দন্ডিত হবে।

অন্যদিকে সম্মতি ছাড়া বিয়ে হলে একজন নারী ১৯৩৯ সালের মুসলিম আইনের ২ ধারা অনুযায়ী বিবাহ বাতিল অনুযায়ী প্রতিকার পেতে পারে। এই আইনে মেয়েটির অধিকার সুরক্ষিত আছে। কোন নারীর ১৮ বছর পূর্ণ না হলে এবং তার সম্মতি ছাড়া বিয়ে হলে তিনি মুসলিম বিবাহ বাতিল আইন, ১৯৩৯ অনুযায়ী আদালতে বিয়ে বাতিলের আবেদন করতে পারেন তবে এক্ষেত্রে দুটি শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হবে-মেয়েটি যদি স্বামীর সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন না করে অর্থাৎ সহবাস না করে। মেয়েটির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর এবং ১৯ বছর পার হওয়ার আগে বিয়েকে অস্বীকার করতে হবে। আইন দিয়ে শাস্তি দেয়া যায় কিন্তু যে জীবন শেষ হইয়ে গেল তা আর ফিরিয়ে আনা যায় না, আমাদের সমাজে পিতা – মাতা চায় তার সন্তান সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করুক কিন্তু আসলেই কি সুখি হয়? অর্থ কড়ি ই কি সুখ? লোকের বলে “ বিয়ের পর সব ঠিক হইয়ে যাবে” যদি তাই হত তবে এত শত বিবাহ বিচ্ছেদ কেনো? কেনো গৃহবধুকে সইতে হয় অত্যাচার? কেনো তাকে জীবন কাটাতে হয় বাপের বাড়ি? এটা সত্য অনেকেই আছে যারা হাসি মুখে বলে “ ভাল আছি” তার মানে সে সুখি নয়, সে তার মা-বাবার মতামতের কাছে নিজের সুখ কে স্বপ্নকে বিলিন করে দিয়েছে। এটা কখনো ই মিথ্যা হতে পারেনা যে মা-বাবার চেয়ে আপন কেও হতে পারে কিন্তু ভুল সবার দ্বারা হতে পারে তাও মিথ্যা নয়। পুতুল খেলার বয়সে মেয়ে কে বিয়ের পিড়িতে বসানোর ঘটনা নতুন নয়। এ প্রবণতা খনিকের নয়, এটি যেন রিতি মতো আমাদের সমাজে প্রথা হইয়ে দারিয়েছে, এ আবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য আমদের উচিত ধর্মভীরু হওয়, সন্তানের ও মা-বাবার মধ্যে বন্ধু সুলভ আচরন সৃস্টি করা, আইনের প্রতি স্রদ্ধাশীল হওয়া, মা বাবার প্রতি স্রদ্ধাশীল হওয়া, আধুনিকতার নামে অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা। তাহলেই হয়তো আমাদের সমাজ থেকে মুছে যাবে অশুদ্ধ বিবাহ নামক কালো অধ্যায় এবং প্রতি ট বিবাহ অনুষ্ঠিত হবে আনন্দঘন পরিবেশে যেখানে থাকবেনা উভয় পক্ষের তর্ক-বিতর্ক, বর ও কনের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা।

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ (প্রথম ব্যাচ), কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
[email protected]

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...

একটি ফুল—

একটি ফুল, একটি ফুলের জন্যে কতো নিষ্পাপ গাছ প্রাণ হারালো, এই বর্বর শুকোনের দল বারংবার ...