প্রকাশিত: ২৮/০৬/২০২০ ৭:৩৬ পিএম

ফারুক আহমদ ::
উখিয়ার সমুদ্র উপকূলীয় ইনানীতে ভূমি অধিগ্রহণ ও উচ্ছেদ আতঙ্ক বিরাজ করছে গ্রামবাসীদের মাঝে। নিজস্ব খতিয়ান ভুক্ত জায়গায় শত বছর ধরে বসবাসরত পরিবারগুলো কে অন্যত্রে সরে যাওয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করা হলে অসহায় পরিবারগুলো কান্নায় ভেঙে পড়েছে। তাদের একটাই প্রাণের দাবি, বসতবাড়ি রয়েছে ওইসব গ্রাম ভূমি অধিগ্রহণের তালিকা হতে বাতিল করে উচ্ছেদ না করার জন্য। তবে পার্শ্ববর্তী ঘরবাড়ি বিহীন খালি আছে এমন জায়গা অধিগ্রহণে তারা স্ব ইচ্ছায় নিজেদের জমি দিতে সম্মতি রয়েছেন।

এদিকে শত বছরের বসত ভিটা ও ঘরবাড়ি আছে ওই অংশটুকু ভূমি অধিগ্রহণের তালিকা হতে বাদ দিয়ে উচ্ছেদ না করার জন্য ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা লিখিতভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।
গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ছোট ইনানী গ্রামে শত বছর ধরে বসবাস করে আসছে পরিবারগুলো। নিজস্ব খতিয়ানভুক্ত পৈত্রিক জায়গায় দালান ঘর সহ সেমি পাকা বসতবাড়ি রয়েছে । মৌজা ইনানী বিএস খতিয়ান নম্বর ২১০০। দাগ নম্বর ৩৪২৮, ৩৪২৯ ও ৩৪২৯ দাগাদির ১ একর সমপরিমান জায়গায় বর্তমানে ৭টি বাড়ি সহ শত শত সুপারি, নারিকেল, আম, জাম কাঠাল গাছ সহ অসংখ্য নানা প্রজাতির ফলজ ও বনজ বৃক্ষ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইনানী এলাকায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ড স্টেশন কাম অফিস নির্মাণ করার জন্য কতৃপক্ষ নীতিগত প্রস্তাব গ্রহণ করে। উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা সমীক্ষা ও জরিপ কার্যক্রম চালানো হয়। সর্বশেষ ইনানী মৌজার বিএস খতিয়ান নম্বর ২১০০ ও ২১১৫ এর ৩৪২৭, ৩৪২৮, ৩৪২৯, ৩৪৩০ ৩৪৪০ ও ৩৪৪১ দাগাদির মোট ৫ একর জমি অধিগ্রহণ করেন। যার মামলা নম্বর হচ্ছে, এল এ ০৭/২০১৮ – ২০১৯।
সরোজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, অধিগ্রহণকৃত ৫ একর জমির মধ্যে পুরো ১ একর জায়গায় শত বছরধরে বসতবাড়ি রয়েছে। দালান ও সেমি পাকা বাড়ি সহ মানুষের বসতি। অবশিষ্ট জায়গা ধান ও মৎস্য চাষ উপযোগী।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে , সংশ্লিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে গত ২৪/৩/২০২০ ইংরেজি তারিখে ৪ ধারা মোতাবেক এবং গত ২/৬/২০২০ ইংরেজী তারিখে ৭ ধারা মোতাবেক বাড়ির মালিক ও জায়গার মালিকদের নামে পর পর ২ টি নোটিশ প্রদান করা হয়। কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ কার্যালয় হতে প্রেরিত নোটিশের স্মারক নম্বর হচ্ছে যথাক্রমে ৪২৬ ও ৪২৯।
ভুক্তভোগী শাহ আলম কামাল উদ্দিন ও জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, শত বছর ধরে আমাদের পৈত্রিক ও খতিয়ানভুক্ত জায়গায় বসবাস করে আসতেছি। অধিগ্রহণের নামে বসত বাড়ি উচ্ছেদ করা হলে অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি হবে। ইনানীতে কোস্টগার্ড বাহিনীর অফিস হউক এবং ভূমি অধিগ্রণের পক্ষে আমরাও। শুধু মাত্র বসতভিটা বাদ দিয়ে আমাদের পৈত্রিক বিএস ২১১৫ নম্বর খতিয়ানের ৪ একর জায়গা ভূমি অধিগ্রহণ করা হলেও কোন আপত্তি নেই।
অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিএস খতিয়ান ২১১৫। দাগ নম্বর ৩৪২৭, ৩৪৪০ ও ৩৪৪১ দাগাদির খতিয়ানভুক্ত চার একর জমি অধিগ্রহণে তার রাজি এবং সম্মতি রয়েছে। গ্রামবাসীর দাবি হচ্ছে বিএস ২১০০ খতিয়ানের ১ একর যা বর্তমানে বসতভিটায় ঘরবাড়ি রয়েছে ওই জায়গাটি অধিগ্রহণের তালিকা হতে বাদ দিয়ে পরিবারগুলো উচ্ছেদ না করে বসবাসের সুযোগ দেয়া হয়।

অশ্রু কন্ঠে ছেনোয়ারা বেগম, রহিমা খাতুন, জোহুরা বেগম ও রোকিয়া বেগম বলেন, এটি হচ্ছে একমাত্র সহায় সম্বল মাথা গোঁজার ঠিকানা । শত বছরের বসতবাড়ি উচ্ছেদ করা হলে আমরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়বো। খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে হবে।
অনুরুপ ভাবে নুরুল আলম আবু তাহের ও বদি আলম জানান শত বছর ধরে আমরা এখানে বসবাস করতেছি। এ গ্রামে রয়েছে শত শত সুপারি নারিকেল আম কাঁঠাল গাছ সহ পুকুর ও দালান ঘর বাড়ি। ভূমি অধিগ্রহণের নামে আমাদেরকে উচ্ছেদ করা হলে তা অত্যন্ত অমানবিক ও মানবাধিকার লংঘন হবে।
একই গ্রামের নবী হোসেন রশিদ আহমদ ও জাফর আলম বলেন আমাদের বসতভিটা ও ঘরবাড়ি আছে কেবল এই জায়গাটা ভূমি অধিগ্রহণের তালিকা হতে বাদ দিয়ে আমাদের অন্যান্য খতিয়ানভুক্ত জমি অধিগ্রহণ করা হলেও আমরা রাজি আছি।
স্থানীয় সুশীল সমাজ, শত বছরের বসতভিটা ও ঘরবাড়ি আছে এই জায়গা টুকু ভূমি অধিগ্রহণ তালিকা হতে বাদ দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তার নিকট পুনঃ বিবেচনা করা দাবি জানান।#

পাঠকের মতামত