প্রকাশিত: ১২/০৫/২০২২ ৯:৩৪ এএম

ইউক্রেনে ‘নজিরবিহীন মানবিক সংকটের’ পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে। তা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহায়তাদান অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছেন ঢাকা সফররত ইউএসএআইডি’র ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ইসোবেল কোলম্যান।

ঢাকায় পাঁচ দিনের সফর শেষ করার আগে বুধবার (১১ মে) রাজধানীর আমেরিকান সেন্টারে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

ইসোবেল কোলম্যান বলেন, মানবিক সহযোগিতার বিষয়ে আমরা নীতিগতভাবে পদক্ষেপ নিয়েছি এবং নিশ্চিত করছি, এখানে শরণার্থীরা (রোহিঙ্গারা) মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য সামগ্রী পাচ্ছে। এটি আমাদের দিক থেকে অগ্রাধিকারের বিষয়।

বিজ্ঞাপন
ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের কথা তুলে ধরে কোলম্যান বলেন, মার্কিন কংগ্রেসে এরই মধ্যে ইউরোপীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অতিরিক্ত তহবিল দিয়ে সহযোগিতার কথা জানিয়েছে। ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার সামরিক হামলা কার্যত বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের হুমকি ও বৈশ্বিক সংকট তৈরি করেছে। আমেরিকানদের উদারতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অতিরিক্ত তহবিল দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইউএসএআইডি মার্কিন কংগ্রেসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। বিনা উসকানিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে সৃষ্ট খাদ্য সংকট (বিশ্বব্যাপী) আমরা মোকাবিলা করতে পারি।

কোলম্যান আরও বলেন, কক্সবাজার ও ভাসানচর দ্বীপ ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা ধারণা পেয়েছি, রোহিঙ্গারা প্রত্যেকেই রাখাইনে তাদের নিজ বাসভূমে ফিরে যেতে চান। কিন্তু তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন ঘটবে না। আমি মনে করি না যে আমরা অর্থপূর্ণভাবে কোনো (রোহিঙ্গা) প্রত্যাবাসনের কোনো সম্ভাবনা দেখতে পাব। (তবে) স্বেচ্ছায় (রোহিঙ্গা) প্রত্যাবাসনের জন্য আমাদের অবশ্যই আশাবাদী হতে হবে।

বিজ্ঞাপন
ইউএসএআইডি’র এই কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার যে নৃশংসতা চালানো হয়েছে, তা স্বীকার করার জন্য নেপিডোকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের ওপর ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আশিয়ান সদস্য দেশগুলোর সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্র কাজ করার জন্য চেষ্টা করছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি) সংকট সমাধানে যথাযথ ভূমিকা পালন করছে কি না— এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে কোলম্যান বলেন, বর্তমানে ইউএনএসসি সবচেয়ে কার্যকর সংস্থা নয়। অবশ্যই আমরা দেখতে চাই যে নিরাপত্তা পরিষদ বিশ্বের বিভিন্ন সংকটে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু বর্তমান (বৈশ্বিক) রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিশেষ করে এই (রোহিঙ্গা) সংকটে এবং অন্যান্য ইস্যুতে (ইউক্রেনসহ) তা করার সম্ভাবনা খুবই কম।

বিজ্ঞাপন
মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে শুরু করে পরবর্তী কিছু দিন ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত হয়ে বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নেন। জাতিসংঘ ওই ঘটনাকে ‘জাতিগত নির্মূলের প্রকৃষ্ট উদাহরণ’ এবং অন্যান্য অধিকার গোষ্ঠী এটিকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছে। মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হলেও গত তিন বছরে একজনও রোহিঙ্গা দেশে ফেরত যায়নি।

কোলম্যান পাইলটভিত্তিতে মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমের আওতায় রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য শিক্ষার সুযোগ তৈরিতে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে যে রোহিঙ্গা শিশু এই শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে তাদের সংখ্যা খুবই নামমাত্র। যুক্তরাষ্ট্র আশা করে, সব বাস্তুচ্যুত শিশু শিক্ষার সুযোগ পাবে, যেন তারা বিশ্বের যোগ্য নাগরিক হতে পারে।

বিজ্ঞাপন
কোলমেন আরও বলেন, ভাসানচরের দূরত্ব, জীবিকার সুযোগের অভাব এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য অপর্যাপ্ত মৌলিক সুযোগ-সুবিধার কারণে যুক্তরাষ্ট্রেরও কিছু উদ্বেগ রয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ কোস্টাল বেল্টের পাশাপাশি বেড়িবাঁধ নির্মাণে তহবিল দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধ সম্পর্কে কোলম্যান বলেন, বর্তমানে ইউএসএআইডি এই বিষয়ে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য অর্থায়ন করছে। এটি ইউএসএআইডি নয়, বরং ইউএস ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোঅপারেশন (ডিএফসি), যা এই ধরনের বাস্তব কাজগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করে।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে কোলম্যান স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার উন্নতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে ইউএসএআইডির ৫০ বছরের অংশীদারিত্বের সাফল্যলোও তুলে ধরেন। ইউএসএআইডি’র মিশন ডিরেক্টর ক্যাথরিন ডেভিস এসময় উপস্থিত ছিলেন।

ইউএসএআইডি’র ডেপুটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ইসোবেল কোলম্যান ৭ থেকে ১১ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করছেন এবং তিনি এখান থেকে থাইল্যান্ড এবং লাওস সফর করবেন। বাসস।

পাঠকের মতামত