প্রকাশিত: ১৪/০৭/২০২০ ৯:২৬ এএম

গত ২ জুলাই মিয়ানমার ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশন আগামী ৮ নভেম্বর সেদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে বলে মানবাধিকার সংগঠন ফরটিফাই রাইটস সংস্থাটির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ম্যাথু স্মিথ সংবাদ মাধ্যমে স্বীকার করেছে। তিনি বলেছেন, বিগত যেকোন নির্বাচনে রোহিঙ্গারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। তাই এবারের আসন্ন নির্বাচনেও তাদের ভোটদান সম্ভব বলে তিনি দাবী করেন। ম্যাথু স্মিথের এমন মন্তব্যের ভিত্তিতে উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভোটের আমেজ পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে রোহিঙ্গাদের বেশ কয়েকজন নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করতে দেখা গেছে। তবে তারা দাবী করছেন ইতিমধ্যে যদি প্রত্যাবাসন তরান্বিত হয় তাহলে সেদেশের নির্বাচনে রোহিঙ্গারা অংশগ্রহণ করতে পারবে বলে তাদের বদ্ধমূল ধারণা। গতকাল সোমবার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা মাঝির সাথে মিয়ানমারের আসন্ন নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা বলেন, যদি তারা রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেয় তাহলে এখান থেকে রোহিঙ্গারা যেকোন উপায়ে মিয়ানমারের ভোট উৎসবে যোগদান করবে। তবে আসলে কি রোহিঙ্গাদের ভোট দেওয়ার আশ্¦স্ত করে তাদেরকে সেখানে নিয়ে নৃশংস অত্যাচার উৎপীড়ন চালাতে পারে, সে ব্যাপারেও তারা গভীর ভাবে চিন্তা ভাবনা করছে।

নব্বইয়ের দশকের গৃহস্থালির তালিকা, এনভিসি, জাতীয় রেজিস্ট্রেশন কার্ড, হোয়াইট কার্ড, হোয়াইট কার্ডের প্রাপ্তি এবং পূর্ববর্তী অন্যান্য সরকার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জারি করা পরিচয় দলিলসহ বর্তমানে দেশটির সরকারের কাছে রোহিঙ্গাদের নথিভুক্তির একাধিক ফর্মের প্রবেশাধিকার রয়েছে। ‘আন্তর্জাতিক
মানবতাবাদী সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে মিয়ানমার সরকার এবং বাংলাদেশে মিয়ানমার দূতাবাস নভেম্বরের নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ভোট দেওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণে এবং পুনরুদ্ধারের প্রমাণ হিসেবে এসব দলিলের পাশাপাশি প্রশংসাপত্রের মতো বিকল্প প্রমাণাদি ব্যবহার করতে পারে’, বলছে ফরটিফাই রাইটস।
এ প্রসঙ্গে কুতুপালং রেজিষ্ট্রার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান হাফেজ জালাল আহমদ তার ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, রোহিঙ্গারা কখন কী ধরনের আচরণ বা কথাবার্তা বলে তার কোন হদীস নেই। তাই মিয়ানমারে আগামী নির্বাচনে সেখানে থাকা অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা যদি শতস্ফূর্ত ও স্বাধীন ভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তাহলে মনে করতে হবে মিয়ানমার তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে রোহিঙ্গাদের প্রতি কিছুটা নমনীয় হয়েছেন। তাহলে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়েও দু’দেশের কূটনীতিক পর্যায়ে এগিয়ে চল নীতি অনুসরণ করতে পারে।
গত ২ জুলাই, দেশটির ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছিল যে বিদেশে বাস করা মিয়ানমারের নাগরিকরা এ বছরের সাধারণ নির্বাচনে অগ্রিম ভোট দিতে পারবে। যেহেতু দেশটির সরকার ২০১০ ও ২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনেও তাদের ভোটদানের ব্যবস্থা করেছিল। রোহিঙ্গা-শরণার্থী নেতৃত্বাধীন নাগরিক সমাজ সংস্থা আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস গত ৩ মে মিয়ানমারের ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশনকে শরণার্থী শিবিরগুলোতে ভোটার নিবন্ধন এবং ভোটদান প্রক্রিয়া চালু করার জন্য একটি খোলা চিঠি লিখেছে। এতে মিয়ানমারে অবস্থানরত বাদবাকী রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের দাবী জানানো হয়েছে।

গত ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে মিয়ানমার আর্মির নেতৃত্বে রোহিঙ্গাদের ওপর গণধর্ষণ, গণহত্যা চলে। এতে বাধ্য হয়ে ১৫ লাখেরও বেশি নারী, পুরুষ ও শিশু পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এখনও ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা যারা মিয়ানমারে অবস্থান করছের তারা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। বর্তমানে ১৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। কিন্তু এখনও কোনো রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়নি।

পাঠকের মতামত