উখিয়ার লম্বাঘোনা গ্রামের ৩ সন্তানের জননী সাহেদা বেগম (৩২)। স্বামী আমির হোসেন অসহায় দরিদ্র কৃষক। নিজেদের জায়গা জমি তেমন নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে, পরের বাড়ীতে দিন মজুরী করে কোন রকমে সংসার চালায়। প্রায় ৬মাস পূর্বে স্ত্রী সাহেদার হঠাৎ প্রচন্ড পেট ব্যাথা, অসহ্য যন্ত্রনা। স্ত্রীর যন্ত্রনায় কাতর হয়ে স্বামী পার্শ্ববর্তী গ্রামের ঔষুধের দোকান থেকে ব্যথার ঔষুধ নিয়ে খাইয়ে দেয়। কিন্তু ব্যথার যন্ত্রনা কমার লক্ষণ নেই। এভাবে ২দিন কাটে। প্রতিবেশীদের পরামর্শে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে কুতুপালংস্থ এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে বিদেশী চিকিৎকরা সাহেদাকে দেখে বেডে ভর্তি করায়। চলে পরীক্ষা নীরিক্ষা। অবশেষে ২দিনের মাথায় ডাক্তাররা জানালো সাহেদার পেটে মাঝারী ধরণের টিউমার শিকঁড় গজাচ্ছে। দ্রুত অপারেশন করা দরকার।
সাহেদার স্বামী আমির হোসেন জানালেন, ডাক্তারদের কথা শুনে দীর্ঘঃশ্বাস ফেলা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। কারণ স্ত্রী অপারেশন করতে হবে উন্নত হাসপাতালে। যা করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। তার কাছে এত টাকাও নেই। তাছাড়া ঘরের ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে দু:চিন্তা। কিন্তু বিদেশী ডাক্তার দোভাষীর মাধ্যমে আমির হোসেনের বিস্তারিত জেনে চিন্তা করতে না করেন। কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে ভর্তির ৪ দিনের মাথায় তাদের এ্যাম্বুলেন্স দিয়ে ওদের দায়িত্বে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যালে। আমির হোসেনকে রোগীর এটেনডেন্টস্ হিসেবে যেতে হয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে আমির হোসেন অসুস্থ স্ত্রীকে বিদেশী দাতব্য সংস্থা এমএসএফ এর সহায়তায় সুস্থ করে ঘরে নিয়ে আসে।
শুধু সাহেদা বেগম নয়। এধরনের অনেক জটিল অসহায়, দরিদ্র রোগীর বিনামূল্যে চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে সুস্থ করে তুলছে হল্যান্ড ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা মেডিসিন স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স বা এমএসএফ। স্থানীয় ওই দাতব্য হাসপাতালে প্রতিদিন রোগীদের ভীড়। রোগীদের অভিমত এখানে কাঁচা ঘরের হাসপাতালের দেশী-বিদেশী ডাক্তার, নার্সদের মাঝে আগত ও ভর্তিকৃত চিকিৎসাধীন রোগীদের প্রতি যে আন্তরিকতা, মায়া-মমতা, কর্তব্য পরায়নতা তাতে রোগীরা অনেকাংশে স্বস্তি ও সুস্থতা ভোগ করে। স্থানীয় ভাবে বিভিন্ন ধরনের দূর্ঘটনা, মারামারিতে গুরতর আহত লোকজন, জটিল রোগীদের অনেককে প্রাথমিক ভাবে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেখা গেছে কুতুপালং এলাকায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি উখিয়া উপজেলার লোকজন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী টেকনাফ, নাইক্ষ্যংছড়ি, রামুর অনেক লোকজনও এখানে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকে।
এমএসএফ এর বাংলাদেশ মিশন প্রধান ও পরিচালক পাভলো কলোভোস জানান, ২০০৯ সাল থেকে এমএসএফ সরকারের অনুমোদন নিয়ে উখিয়ার কুতুপালং এর অবস্থানরত নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের নানা মুখি স্বাস্থ্য ও চিকৎসা সেবা প্রদান করে আসছে। তথ্য মতে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৮ হাজার রোগীকে আউট ডোরে, গড়ে ২০০-২৫০ জন রোগীকে ইনডোর বা হাসপাতাল বেডে রেখে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। এসব রোগীদের চিকিৎসার জন্য এখানে ৪২টি বেড রয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে ৫০/৬০ জন গর্ভবতী মহিলার সন্তান প্রসব করানো সহ মা ও শিশুর নিবিড় পরিচর্যা করা হয়। উন্নত যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য অবকাঠামোগত অপ্রতুলতার কারণে প্রতি মাসে ৭০/৭৫ জন জটিল রোগীকে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতালের মাধ্যমে এমএসএফ এর সহায়তায় চিকিৎসা করানো হয়।
এসব রোগীদের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনা করে যাবতীয় চিকিৎসা, ঔষুধ পথ্য সহায়তা এমএসএফ বহন করে থাকে। এখানে এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত কিছু রোগীর চিকিৎসাও প্রদান করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, স্থানীয় লোকজন, রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কল্যান, শিশু ও গর্ভবতী মাদের পুষ্টি হীনতা দূরিকরন সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও চিকিৎসার খাতে ১৭৩জন নারী পুরুষ কর্মরত রয়েছেন। তাদের অর্ধেকের বেশি চিকিৎসা খাতে নিয়োজিত। উখিয়ার কুতুপালং ছাড়াও ঢাকার কামরাঙ্গির চরে কর্মরত ক্ষুদ্র কারখানার দরিদ্র শ্রমিকদের স্বাস্থ্য উন্নয়ন যৌন হয়রানির শিকার লোকজনদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে এমএসএফ। চিকিৎ বিজ্ঞানের নীতিতে রোগীদের গোপনীয়তাকে প্রাধান্য দেওয়ায় অনেক সময় গণমাধ্যমকর্মী ও সরকারী সংস্থার লোকজনদের হাসপাতাল অভ্যন্তরে সংরক্ষিত ব্যবস্থা বজায় রাখায় হয়ত অনেকই ভুল বুঝে থাকেন। এক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার জন্য তিনি সংস্থার পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, ১৯৯২ সালে ব্যাপক হারে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা শরনার্থীর আগমন ঘটায় এমএসএফ বাংলাদেশ সরকারের সহযোগীতায় রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করে বেশ কয়েক বছর। সরকার ও স্থানীয় লোকজনের অব্যাহত সহযোগীতায় এমএসএফ স্থানীয় লোকজনের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি জানান।
উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে রূপ নিয়েছে। ফলে দেখা দিয়েছে উপকূলে ঝড়ের শঙ্কা। তাই দেশের ...
পাঠকের মতামত