প্রকাশিত: ১০/০১/২০১৯ ২:০৮ পিএম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক::
বাংলাদেশের ভূখণ্ডে রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আরাকান আর্মির (এএ) ঘাঁটি থাকার অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে ঢাকা। ওই দুই সংগঠনের মধ্যে যোগসাজশ আছে দাবি করে ৭ ডিসেম্বর (সোমবার) মিয়ানমার অভিযোগ করে, বাংলাদেশে তাদের ঘাঁটি রয়েছে। বুধবার (৯ জানুয়ারি) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে মিয়ানমারের ওই অভিযোগকে ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের অধিকার সুরক্ষার নামে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে লড়ছে আরসা। আর ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি। সম্প্রতি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আরাকান আর্মির (এএ) ঘাঁটি রয়েছে বলে অভিযোগ তোলে মিয়ানমার। দুই সংগঠনের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে দাবি করে দেশটির প্রেসিডেন্টের দফতর অভিযোগ করেছে,মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তারা বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে এক হয়ে কাজ করছে।

৯ জানুয়ারি (বুধবার) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে দাবি করা হয়, এসব সংগঠনের কোনোটিই বাংলাদেশে পরিচালিত হচ্ছে না এবং বাংলাদেশও ‘কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীকে নিজেদের মাটিতে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে না’। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এ অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। বাংলাদেশে নিরাপপত্তা বাহিনীর উচ্চ মাত্রার সতর্কতা ও কার্যকরী প্রতিরোধ ব্যবস্থার মধ্যে এ দেশে কোনও জঙ্গি ঘাঁটি পরিচালিত হওয়া সম্ভব নয়।’ এসব জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

ফেডারেল রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আারাকান আর্মি বিগত কয়েক বছর ধরে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। গত মাস থেকে সংগঠনটি তাদের সামরিক তৎপরতা জোরদার করে। সম্প্রতি চারটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালিয়েছে তারা। অন্যদিকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের অধিকার রক্ষার কথা বলে আরসা ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি সীমান্ত চৌকিতে হামলা চালায়। ওই হামলার অজুহাতে রাখাইনে সংঘবদ্ধ ও কাঠামোগত সন্ত্রাস জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। পূর্ববর্তী সেনাপ্রচারণার ধারাবাহিকতায় পরিচালিত হয় কথিত শুদ্ধি অভিযান। ওই সেনা অভিযানে গণহত্যার নৃসংশ বাস্তবতা এড়াতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

২০১২ ও ২০১৭ সালে দুই দফায় জাতিগত নিধন ও গণহত্যার শিকার হয়ে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। বাকীদের রাখাইন থেকে তাড়াতে বিভিন্ন ধারার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার। সমগ্র আন্তর্জাতিক দুনিয়া যেখানে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে, মিয়ানমার সেখানে ওই জনগোষ্ঠীর মানুষকেও ‘বাংলাদেশের নাগরিক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। পাশাপাশি বহুদিন থেকেই মিয়ানমার আরসার সদস্যদের ‘বাঙালি’ আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের ওপর তাদের দায় চাপানোর চেষ্টা করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে আরসা ও এএ’র ঘাঁটি থাকার অভিযোগ তোলে নেপিডো।

অভিযোগের একদিনের মাথায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা তখন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা স্মরণ করিয়ে দেন। সেদিন তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, এমন অভিযোগের জন্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ। বুধবার (৯ জানুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করলো বাংলাদেশ।

পাঠকের মতামত