প্রকাশিত: ২০/০৬/২০১৮ ৭:২৪ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:৪৪ এএম

সৌদি আরবে মোট নারী কর্মীর সংখ্যা দুই লাখের মতো। সেখান থেকে মাত্র চার হাজার নারী কর্মী নির্যাতিত হয়ে ফেরত আসা বড় সমস্যা নয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজীবুর রহমান। মঙ্গলবার (১৯ জুন) দুপুর আড়াইটায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সৌদি প্রবাসী শ্রমিকদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তবে আগামীতে যাতে কোনো নারী কর্মী এরকম নির্যাতিত হয়ে ফেরত না আসে। এ বিষয়ে কাজ চলছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রবাসী শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও নারী শ্রমিকদের সমস্যা-সম্ভাবনার কথা শোনেন তিনি।

নাটোরের নীলুফা ইয়াসমীন ভিডিও কনফারেন্সে জানান, গত ৪ এপ্রিল তিনি সৌদি আরবে গেছেন। ৪০ হাজার টাকা দিয়ে দালালের মাধ্যমে তিনি সৌদিতে যান। তিনি যেতে চাননি। সৌদিতে না গেলে মামলা দেবেন এ হুমকি দিয়ে দালাল তাকে জোর করে পাঠান। সৌদিতে যাওয়ার পর এক বাসায় কাজ শুরু করেন। কিন্তু সে বাসা থেকে তাকে বেতন দেওয়া হয় না। অন্য বাসায় যেতে চাইলে মালিক বলেন, আমি তো তোমাকে কিনে নিয়েছি। এরপর নির্যাতন শুরু করেন। কয়েকদিন হলো তিনি সৌদি আরবে বাংলাদেশ অ্যাম্বাসিতে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন ওই নারী দেশে ফিরতে চান।

শাহিনা পারভীন বলেন, ‘আমি কয়েক বাসায় কাজ করার পর সবশেষ অন্য একটি বাসায় কাজ নিয়েছি। কিন্তু গত চার মাসে কোনো বেতন পাইনি। আমার বাবা ক্যান্সারের রোগী। বাবার চিকিৎসার জন্য টাকা পাঠাতে হবে। তারপরও বেতন দিচ্ছে না।’

মুখ্য সচিবের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি দেশে ফিরতে চাই। কিন্তু আমার কাছে দেশে ফেরার কোনো টাকা নেই।’

আব্দুস শহীদ নামে এক প্রবাসী বলেন, ‘১৫ দিন হলো আমি সৌদি আরবে এসেছি। আহমেদ আল মাদানি নামে একটি কোম্পানিতে ১২০০ রিয়াল বেতনে কাজ করতে যাই। ভিটেমাটি বিক্রি করে ৪ লাখ টাকা দালালের হাতে তুলে দিই। সৌদিতে আসার পর ওই কোম্পানিতে কাজ মেলেনি। আমি মসজিদে ছিলাম কয়েকদিন। সেখান থেকে কয়েকদিন পার্কে পার্কে রাত কাটিয়েছি।’

কান্নায় ভেঙে পড়ে প্রবাসী ওই শ্রমিক বলেন, ‘আমি নিঃস্ব, সব বেচে এসেছি। এখন কী করব বুঝতে পারছি না।’ তিনি প্রবাসী সচিবকে অনুরোধ করে বলেন, ‘আপনারা উদ্যোগ নেন। কেউ যাতে ফ্রি ভিসা আর সাপ্লাই ভিসার মাধ্যমে সৌদিতে না আসতে না পারেন।’

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব প্রবাসীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পাসপোর্ট সমস্যা। এটাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। আগামী ২১ জুন ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম চালু হবে। সেটা যাতে সৌদি আরবে প্রথম চালু হয় সে জন্য পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আমি অনুরোধ করব।’

নারী কর্মীদের সমস্যার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই উদ্যোগী হয়েছেন যাতে বিদেশে নারী কর্মীরা ভালো থাকেন। আগামীতে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সে জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী মন্ত্রণালয় কাজও করছে।’

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার এনডিসি বলেন, ‘নির্যাতিত নারীরা যখন দেশে ফিরছিলেন তখন বিমানবন্দরে নিজে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এতে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, সৌদিতে যাওয়ার আগে তারা আরবি ভাষা শেখেনি। কোনো কাজও শেখেনি। মালিকরা যখন তাদের আরবি ভাষায় কাজের কথা বলেন তখন তারা ভাষা বুঝতে পারেননি। এ কারণে তারা মারধরের শিকার হয়েছেন। মার খাওয়ার পর তারা বলেছেন, আমি আর থাকব না। তখন মালিকরা বলেছেন, কেন তুমি চলে যাবে? আমি তো তোমাকে কিনে নিয়েছি।’

নমিতা হালদার বলেন, ‘সব বিষয় জেনে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এখন থেকে কোনো নারী কর্মী আরবি ভাষা না শিখে সৌদি যেতে পারবেন না। ভাষা শিখে পরীক্ষায় পাস করেই কেবলমাত্র যেতে পারবেন। পাশাপাশি তাদের কাজও শিখতে হবে।

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে একীভূত করার প্রস্তাব ঢাকার প্রত্যাখ্যান

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে বসবাসে সব ধরনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। একইসাথে ...