প্রকাশিত: ১৮/১১/২০১৮ ১২:২৭ পিএম , আপডেট: ২০/০৫/২০১৯ ১০:১৩ পিএম

২৫ অাগষ্ট ২০১৭, সকালে ঘুম ভাঙ্গল এক মর্মান্তিক দৃশ্যে। মিয়ানমারে নির্যাতিত লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে ছুটে আসছেন আমাদের দেশে, আমার জম্ম স্থান উখিয়ার পালংখালী ও রাজাপালং ইউনিয়নে। সেই দৃশ্য দেখার পরের ৪৪৫টি সকাল কেটে গেলো আজ। কিন্তু এক মূহুর্তের জন্যও মন থেকে মুছতে পারিনি সেই সকালের দৃশ্য। কারণ তারা অনেকে এসেছিলেন কারো মা, কারো বাবা,ছেলে, মেয়ে, স্বামী, স্বজন, ঘর, বাড়ি সম্পত্তি সহ সবকিছু হারিয়ে, তাদের কষ্টের কান্নায় সেদিন কেঁদেছিলেন বিশ্ববাসী। সেদিন উখিয়া তরুণ প্রজন্ম সহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছিল “মানবতা কাকে বলে? মানবতা কি? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন উখিয়াবাসীর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আপনারা দুই বেলা খেয়ে এক বেলা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের দিন, কিন্তু উখিয়ার মানুষ তার চেয়ে বেশী মানবিক হয়ে এক বেলা খেয়ে দুবেলাই তাদের দিয়েছিলেন। আমার মত উখিয়ার লক্ষ তরুণ প্রজন্মরা নিজের ব্যবহারের কাপড়, জমানো টাকা, হাত খরচ, বই কেনার টাকা, টিওশনি ফি, ঔষুধের টাকা পর্যন্ত দিয়ে মানবতা দেখিয়েছিলেন শুধু তাই নয়, সেই সময়ে উখিয়ার প্রতিটি তরুণ-তরুণীরা না খেয়ে, না ঘুমিয়ে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য খাবার সংগ্রহ করেছিলেন। তরুণরা রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালং করেছিলেন, উখিয়া-টেকনাফের মানুষ ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় আজও জ্যামে আটকে আছে। দশ টাকার ভাড়া এখনো ত্রিশ টাকা দিচ্ছে, নিত্যপণ্য তিন গুন বেশী দামে কিনে এখনো খাচ্ছে, অনেকে নিজের ঘর-বাড়ি, ভিটা হারিয়ে আজ প্রায় সর্বহারা। কথায় আছে, ত্যাগীদের কোন মূল্য নেই। আজ উখিয়ার ছেলে-মেয়েরা সিনিয়র কোন পোস্টে চাকরি করতে পারেনা, কারণ এখন পরিবেশ সুন্দর হয়ে গেছে। যে কয়েক জন চাকরি করে তারা প্রতিনিয়ত সিনিয়র বইঙ্গা কর্মকর্তাদের নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রতিদিন চাকরী হারাচ্ছে। কোন এনজিও একবারও চিন্তা করেনা শুরুতে যখন কোন এনজিও ছিলনা তখন উখিয়ার ছেলে- মেয়েরা কিভাবে ১১ লক্ষ রোহিঙ্গাকে খাবার দিয়েছে, ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে, কাপড়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কিভাবে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আজ উখিয়া সব কয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেনাবাহীনী, পুলিশ, এনজিও’র দখলে। তাতে কি আমরা শিক্ষা থেকে বজ্ঞিত হচ্ছিনা? সব কিছুতে আমরা নির্যাতিত হয়েছি। আজ আমরা সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে পারিনা। আমাদের ক্ষতির পরিমান অপূরণীয়। পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ সেনাবাহিনীর দখলে থাকায় গত দেড় বছর এই ইউনিয়নের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪ টায় পর্যন্ত মানুষের কষ্টে দেখে আমি অভ্যস্ত। আজ সকালে পালংখালী ইউনিয়নের সেবা নিতে আসা অসুস্থ গর্ভবতী এক মহিলার কষ্ট দেখে দীর্ঘ জমে থাকা অনেক অনুভূতি শেয়ার করে ফেললাম। ভূল হলে সুন্দর ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

রাষ্ট্রের দায়িত্ব প্রাপ্তদের কাছে আমার অনুরোধ, আমাদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের সুন্দর উখিয়া গড়ার সূযোগ দিন।

লেখকঃ
হুমাইরা সুলতানা শিউলী,
পালংখালী ইউনিয়ন, উখিয়া, কক্সবাজার।
ছাত্রী, এইচএসসি ১বর্ষ, কক্সবাজার সিটি কলেজ।

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...

একটি ফুল—

একটি ফুল, একটি ফুলের জন্যে কতো নিষ্পাপ গাছ প্রাণ হারালো, এই বর্বর শুকোনের দল বারংবার ...