প্রকাশিত: ১১/০১/২০১৭ ৭:৫৪ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::

শীঘ্রই আলোর মুখ দেখছে যাচ্ছে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম এ রেল যোগাযোগ প্রকল্প। প্র্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের নান্দনিক সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি বদলে যাবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ সামগ্রিক চিত্র।
এ রেললাইনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থাপনা হচ্ছে কক্সবাজার রেলওয়ে টার্মিনাল। পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণের বিষয়টি মাথায় রেখেই কক্সবাজার প্রান্তে নির্মাণ করা হবে এক দৃষ্টিনন্দন রেলওয়ে টার্মিনাল। নির্মাণ শেষ হলে এ টার্মিনালটি হবে মনোরম স্থাপত্যশৈলীর এক অপূর্ব নিদর্শন। কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে অত্যন্ত সামানজস্যপূর্ণ এই স্থাপনা পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেবে কয়েক গুণ – যা
দেশি-বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই টার্মিনালকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে বর্তমান সরকার। এ টার্মিনালের চারপাশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় হোটেল, বাণিজ্যিক ভবন, বিপণী বিতান, বহুতলবিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণের বহুমুখী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার।
চলতি বছরের জুনেই শুরু হবে ১২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রেলপথের অবকাঠামোসহ রেল লাইনের নির্মাণকাজ।
অগ্রাধিকার ও দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের ১০টি মেগা প্রকল্পের অন্যতম
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজ।
আন্তর্জাতিক রেল নেটওয়ার্ক ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের (টিএআর) সঙ্গে যুক্ত হতেই রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাকি ৪ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ব্যয় করা হবে। ইতিমধ্যে এ প্রকল্প নির্মাণে ৬১৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক বলেন, ঠিকাদার নিয়োগে টেন্ডার প্রক্রিয়া গত নভেম্বর মাসে শেষ হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতেই নির্মাণকাজ শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, খুব শীঘ্রই চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেল লাইন নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ করা হলে পর্যটকসহ কয়েক লাখ যাত্রী উপকৃত হবে।
জানা গেছে, ১৮৯০ সালে ব্রিটিশ আমলে প্রথম পরিকল্পনা নেয়া হয় এই রেলপথ নির্মাণে। চট্টগ্রাাম ও মিয়ানমারের আকিয়াব বন্দরের মধ্যে রেল যোগাযোগ স্থাপনে প্রথম আগ্রহ প্রকাশ করেছিল সাবেক ব্রিটিশ কলোনি মিয়ানমার। মিয়ানমার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম থেকে রামু ও কক্সবাজার হয়ে রেলপথ নির্মাণের জন্য সমীক্ষা চালানোর উদ্যোগ নেয়।
১৯০৮-০৯ সালে সমীক্ষাও চালায়। এরপর ১৯১৭ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম-দোহাজারী-রামু হয়ে আকিয়াব পর্যন্ত আবারও সমীক্ষা চালানো হয়। প্রকল্পের কাজও শুরু হয়। তখন চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটারের মতো রেলপথ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে বাকি রেলপথ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। পরে ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমার ৩টি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে। এরপর ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সরকার উদ্যোগ নিলেও সফল হয়নি। জাপান রেলওয়ে টেকনিক্যাল সার্ভিস
(জেআরটিএস) ১৯৭১ সালে ট্রাফিক সম্ভাবনা সমীক্ষা করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় তাও সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবার উদ্যোগ নেয়া হয়। তৎকালীন সরকারের অনুরোধে ১৯৭৬-৭৭ সালে আবার সমীক্ষা করে জেআরটিএস। পরে ১৯৯২ সালে এসকাপ কমিশন অধিবেশনে ৩টি ইউরো-এশিয়া রেল নেটওয়ার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার নতুন রেল লাইন স্থাপন প্রকল্প পরিচালক মাহাবুবুল হক বকসি জানান, প্রায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এ নতুন রেল পথ নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থ বছর থেকে এই রেল লাইনের নির্মাণকাজ শুরু হবে।
শুরুতে মিটারগেজ সিঙ্গেল লাইনে হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে ব্রডগেজসহ ডুয়েল লাইনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে প্রকল্পটি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে পর্যটন শহর কক্সবাজার রেল নেটওর্য়াকের আওতায় আসবে। এর ফলে পর্যটনশিল্পের যেমন বিকাশ ঘটবে, তেমনি বিস্তৃত হবে সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্যের।
এ রেল লাইন নির্মিত হলে পর্যটকদের কক্সবাজার যাতায়াতে যেমন সুবিধা হবে সেই সাথে সাধারণ যাত্রীদেরও দুর্ভোগ লাগব হবে অনেকখানি। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেল লাইনটি চালু হলেই কক্সবাজারের পর্যটক সংখ্যা দ্বিগুণ হবে বলে মনে করছেন অনেকে। বর্তমানে পর্যটকদের কক্সবাজার যাতায়াত বেশ ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষের ব্যাপার। ঢাকা থেকে বাসযোগে সরাসরি কক্সবাজার যেতে ভাড়া লাগে প্রায় ৩,০০০ টাকা এবং সময় লাগে প্রায় ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা। সবচেয়ে বড়কথা, এ দীর্ঘ সময় বাসে ভ্রমণ করা অনেকের জন্যই বেশ কষ্টসাধ্য ও ক্লান্তিকর। তাই ইচ্ছা থাকা সত্বেও অনেকে কক্সবাজার যেতে পারছেন না। আবার ব্যয়বহুল হওয়ায় আকাশ পথের যাতায়াতও অনেকের নাগালের বাইরে। ঢাকা থেকে বিমানযোগে কক্সবাজার যেতে খরচ লাগে প্রায় ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা। অনেক পর্যটকেরই এত টাকা ভাড়া দিয়ে কক্সবাজার যাওয়ার সামর্থ নেই। পর্যটকদের এই ভোগান্তির কথা বিবেচনা করেই জনবান্ধব বর্তমান সরকার রাজধানী ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সরাসরি রেল যোগাযোগের বিষয়টি অগ্রধিকার প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এক্সপ্রেস রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে সময় লাগবে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা। কক্সবাজার ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের পাশাপাশি সরকারের এ মহৎ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে দেশের সাধারণ জনগণ ।

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু, দৈনিক উৎপাদন ৩০ মেগাওয়াট

কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছেছবি: প্রথম আলো কক্সবাজার সদর উপজেলার ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টার্গেট কিলিং!

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলছে ‘টার্গেট কিলিং’। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ...

জান্নাতুলকে খুনের কথা আদালতে স্বীকার করলেন কক্সবাজারের রেজা

রাজধানীর পান্থপথে আবাসিক হোটেলে চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ...

খাদ্য সংকটে সেন্টমার্টিন

হেলাল উদ্দিন সাগর :: বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ...