প্রকাশিত: ১২/০৬/২০১৮ ৫:৪৭ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:৫৭ এএম

চট্টগ্রাম: পতেঙ্গা সমুদ্র উপকূলে উপড় হয়ে মুখ থুমড়ে পড়ে থাকা স্কুলছাত্রী তাসপিয়া আমিনের বিষক্রিয়া বা অ্যালকোহলে মৃত্যু হয়নি। তার মৃত্যু হয়েছে অন্য কিছুতে।

আর সেই মৃত্যু রহস্য জানার জন্য ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে কবে এই প্রতিবেদন পাওয়া যাবে সেই বিষয়ে কোনো কিছু জানা নেই বলে জানালেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিএমপি পতেঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন।

এসআই আনোয়ার বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্র উপকূলে উপড় হয়ে মুখ থুমড়ে পড়ে থাকা তাসপিয়ার ময়নাতদন্তের ‘ভিসেরা প্রতিবেদন’ এসেছে। গত সোমবার প্রতিবেদনটি আসে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে।

ভিসেরা পরীক্ষায় ফলাফল ‘নেগেটিভ’। অর্থাৎ বিষ বা অ্যালকোহল জাতীয় কোনো কিছুর ক্রিয়ায় তাসপিয়ার মৃত্যু হয়নি বলে জানান মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। তবে তার মৃত্যু হয়েছে অন্য কোনো কারণে। সেই রহস্য উদঘাটনের জন্য প্রয়োজন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন।

এসআই আনোয়ার হোসেনের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ভিসেরা প্রতিবেদন ঢাকা থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে এসে জমা হয়েছে। বিস্তারিত ওই প্রতিবেদনই আছে। কিছু জানতে চাইলে আরও অপেক্ষা করতে হবে।

মঙ্গলবার (১২ জুন ), চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র উপকূলে পাথরের ওপর মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা তাসপিয়ার মৃতদেহ উদ্দারের একমাস ১২ দিন হল। এর মধ্যে তদন্তের কোনো অগ্রগতি চোখে পড়ার মত নেই।

মামলার বাদী ও নিহত তাসপিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন বলেন, কোনো কারণে হয়তো পুলিশ মামলার তদন্তে সফলতা দেখছে না। তার দাবি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)কে দায়িত্ব দেয়া হলে স্বল্প সময়েই সব বেরিয়ে আসবে।

আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পিবিআইয়ের তত্ত্বাবধানে তদন্ত চেয়ে আদালতে আবেদন জানাবেন বলেও জানান তিনি।

এই বিষয়ে জানতে চাওযা হয় বাদীপক্ষের আইন কর্মকর্তা এডভোকেট চন্দন দাশের কাছে। ঢিলে-তালে তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এমনিতেই জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। এ কারণে পিবিআইয়ের তদন্ত চেয়ে আবেদন করা হবে।

এর আগে তাসপিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি আদনান মির্জা ও আসিফ মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপস্থিত হতে পারেননি। ফলে পিছিয়েছে পুরো এক মাস। অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদনের রিমা- শুনানীর পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।

এই বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পতেঙ্গা থানার এসআই আনোয়ার হোসেন জানান, সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকায় আদালতে হাজির হতে পারেননি।

আগামী ২৮ জুন আদনানের রিমান্ড শুনানির দিন ঠিক রয়েছে বলে তিনি জানান।

এদিকে তিনদিনের রিমান্ডে মিজানুর রহমান ওরফে আসিফ মিজান গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, আসিফ মিজানকে আবারো রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আইনজীবীরা মত দিয়েছেন এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের দরকার।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১ মে তাসপিয়া নগরীর ও.আর নিজাম রোডের বাসা থেকে বেরিয়ে প্রেমিক আদদানের সাথে প্রেমের এক মাস পূর্তি উৎসবে মিলিত হয় চায়না গ্রিল নামক একটি রেস্টুরেন্টে। এরপর আর আর বাসায় ফেরেননি তাসপিয়া।

পরে ২ মে নগরীর পতেঙ্গায় সমুদ্র উপকূলে পাথরের ওপর উপড় হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকাবস্থায় মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে প্রেমিক আদনান ও আদনানের বন্ধু মিজানুর রহমান ওরফে আসিফ মিজান।

এ মামলার অপর আসামিদের মধ্যে রযেছেন শওকত মিরাজ, আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসির ছাত্র ইমতিয়াজ সুলতান ইকরাম, কথিত যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ ফিরোজ ও তার সহযোগী সোহায়েল ওরফে সোহেল।

এই চার আসামি ঘটনার পর থেকে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। আর তদন্তের অগ্রগতি রয়েছে রহস্যাবৃত্তে

পাঠকের মতামত