প্রকাশিত: ০৮/০১/২০১৯ ৮:২৩ এএম , আপডেট: ০৮/০১/২০১৯ ৮:২৯ এএম

বিদেশ ডেস্ক
অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় নিতে চাওয়া সৌদি আরবের তরুণী রাহাফ আল কুনুনকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তত্ত্বাবধানে কিছুদিনের জন্য থাকার অনুমতি দিয়েছে থাইল্যান্ডের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। ফলে আপাতত তিনি প্রত্যর্পণ ও পরিবারের সদস্যদের হাতে অনার কিলিংয়ের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থেকে মুক্ত। অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পথে ট্রানজিটের সময় থাইল্যান্ডের কর্মকর্তারাই তাকে জোর করে কুয়েতেগামী বিমানে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, রাহাফ তার পরিবারের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। চুল কাটার জন্য তাকে ছয় মাস ঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। তাছাড়া, ইসলাম ত্যাগের কারণে তার এক কাজিন তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে।

১৮ বছরের রাহাফ আল কানুন সৌদি আরবের বাসিন্দা। পরিবারের সদস্যদের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি পালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। তার পরিবার কুয়েতে ভ্রমণে গেলে তাদের সঙ্গে তিনিও সেখানে যান। অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয়প্রার্থী হওয়ার জন্য কুয়েত থেকে তিনি পালান। যাওয়ার পথে তার বিমান যাত্রাবিরতি করে থাইল্যান্ডে।

ট্রানজিটের ওই সময়েই থাইল্যান্ডের অভিবাসন কর্মকর্তারা তাকে জোর করে কুয়েতগামী বিমানে ফেরত পাঠাবার চেষ্টা করেন। রাহাফ তাদের চেষ্টাকে ভণ্ডুল করে দিতে নিজেকে হোটেলের কক্ষে আবদ্ধ রাখেন। দরজার সামনে দিয়ে রাখেন ভারি জিনিস, যাতে কক্ষে সহজে ঢোকা না যায়। তিনি অভিবাসন কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত না হলে তিনি বের হবেন না।

রাহাফের এক বন্ধুর কাছ থেকে গার্ডিয়ান জেনেছে, তিনি ইসলাম ত্যাগ করেছে। ধর্মত্যাগের কারণে সৌদি আরবে গেলেই তাকে হত্যা করা হবে। রাহাফের এক কাজিন তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। রাহাফকে হত্যা করতে না পারলে তারা সেখানকার সমাজে গিয়ে দাঁড়াতে পারবে না। ফলে যেকোনও উপায়েই হোক না তারা রাহাফকে হত্যা করতে চাইবে।

তাকে যেন ফেরত যেতে না হয় তা নিশ্চিত করতে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার সহায়তা চেয়ে ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি রাহাফ। আমি একটা হোটেলে আছি। নিজেকে রক্ষার জন্য আমার একটি দেশের সহায়তা দরকার যত দ্রুত সম্ভব। আমি আশ্রয়প্রার্থী। আমার পরিবার খুব রক্ষণশীল। চুল কাটার কারণে তারা আমকে ছয় মাস ঘরে আটকে রেখেছিল।’ ফেরত পাঠালে তাকে কারাগারে পাঠানো হবে উল্লেখ করে তিনি ভিডিওতে আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, জেল থেকে বের হওয়ার পর তারা আমকে মেরে ফেলবে।’

থাইল্যান্ডের অভিবাসন পুলিশের প্রধান গত সোমবার (০৭ জানুয়ারি) সাংবাদিকদের বলেছেন, রাহাফকে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে আপাতত থাইল্যান্ডে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। ইউএনএইচসিআর রাহাফের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সপ্তাহখানেক সময় নিতে পারে।

এদিকে রাহাফের সমর্থনে টুইটারে থাইল্যান্ডে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, তিনি রাহাফের পাশে থাকবেন। রাহাফ যেসব দেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করেছেন, সেসব দূতাবাসের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখছেন। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ফিল রবার্টসন বলেছেন, রাহাফের যে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দরকার তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

পাঠকের মতামত