প্রকাশিত: ২১/০১/২০১৭ ১০:০৩ পিএম , আপডেট: ২২/০১/২০১৭ ১২:০৫ এএম
নিউজ ডেস্ক::

অর্থের বিনিময়ে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের দেশে অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে কয়েকটি দালাল চক্র। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্তের দুর্গম এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গাদের তারা দেশে নিয়ে আসছে। ওই চক্রের সহায়তায় গত বছরের ৯ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ২৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। প্রবেশে সহায়তাকারী চক্রের ১৬৮ দালালকে চিহ্নিত করেছেন গোয়েন্দারা। তাদের মধ্যে ১১৪ জনই টেকনাফের। ওই তালিকায় নারী রয়েছে; আছেন বান্দরবান ও টেকনাফের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৩ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক বিশেষ প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের সহায়তাকারী দালালদের পরিচয় তুলে ধরে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
ওই বিশেষ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দালাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যাও দিন দিন বাড়বে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পাঁচটি সুপারিশ করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সমকালকে বলেন, রোহিঙ্গাদের সহায়তাকারী দালালদের ব্যাপারে আমাদের কাছে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো শৈথিল্য সহ্য
করা হবে না।
কক্সবাজার বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার সমকালকে বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহায়তাকারী দালালদের বিজিবি প্রায়ই আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার একজনকে আটক করা হয়। তার মাধ্যমে যেসব রোহিঙ্গা এসেছিল, তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া দালালরা যেসব যানবাহন ব্যবহার করে অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে, তার চালকদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. এ কে এম ইকবাল হোসেন সমকালকে বলেন, দালালদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। গত বুধবার জেলার মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায়ও সব থানার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অনুপ্রবেশে সহায়তাকারীদের বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
টেকনাফ থানার ওসি আবদুল মজিদ সমকালকে জানান, দালালদের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় ৫টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এরই মধ্যে ৩০ দালালকে আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে।
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূর আহম্মেদ আনোরী বলেন, অনেকেই টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের সহায়তা করছে তা সঠিক। তাদের বিষয়ে আইন-শৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য দেওয়া হচ্ছে। আশা করি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ নিয়ে আরও তৎপর হবে।
তালিকায় দুই জনপ্রতিনিধি ও এক নারী :তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বান্দারবান ও টেকনাফের দুই ইউপি মেম্বারও অর্থের বিনিময়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে। তারা হলেন_ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমটুম জলপাইতলী ইউপির সদস্য কামাল উদ্দিন ও টেকনাফের হ্নীলার ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন। একমাত্র নারী হিসেবে তালিকায় টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাখালী গ্রামের রেহেনা আক্তারের নাম রয়েছে।
তালিকায় নাম থাকলেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহায়তা করার কথা অস্বীকার করেছেন জামাল উদ্দিন। তিনি সমকালের কাছে দাবি করেন, রোহিঙ্গাদের সহয়তাকারীদের বিরুদ্ধে আমি স্থানীয় পত্রিকায় লেখালেখি করি। তালিকায় আমার নাম থাকা যড়যন্ত্রমূলক।
প্রতিবেদনে মন্তুব্য ও সুপারিশ : গত বছরের ৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর কাওয়ারবিলে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদর দপ্তরে হামলা চালিয়ে ১০ সদস্যকে হত্যা করা হয়। এর পরই মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ অভিযানে কয়েকশ’ রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করা হয়। শুরু হয় দমন-পীড়ন।
প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে উদ্ভূত পরিস্থিতির পর দালালদের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে দেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাড়ছে। টেকনাফসহ সীমান্তের যেসব পয়েন্ট দিয়ে দালালরা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহায়তা করছে সেইসব পয়েন্টে বিজিবির পাশাপাশি কোস্টগার্ডকেও সতর্ক থাকার সুপারিশ করা হয়। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের শনাক্ত, সুনির্দিষ্ট সংখ্যা নিরূপণ ও পরবর্তী সময়ে প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে তাদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখার জন্য বলা হয়েছে। আরও বলা হয়, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত থাকলে সীমান্তে রোহিঙ্গাদের চাপ বাড়বে। বাংলাদেশে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর দমনাভিযান বন্ধে বাংলাদেশ সরকারকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জোর তৎপরতা অব্যাহত রাখারও সুপারিশ করা হয়েছে।
বাকি ১৬৫ দালাল যারা :টেকনাফের উলুবুনিয়ার মো. কালুর ছেলে হাফেজ আহমেদ, তুলাতলীর খালেকের ছেলে গোলাম আকবর, হোয়াইক্যংয়ের মোস্তাফিজুর রহমান, কুনাপাড়ার নূর আলম, ফরহাদ, আবুল মঞ্জুর, সালাউদ্দিন, মো. তোফায়েল, আব্দুল করিম, জাহেদ হোসেন, আব্দুল মাবুদের ছেলে আমির হোসেন, উনছিপ্রাংয়ের রমজান আলী লেদু, তৈয়ম গোলামের ছেলে আমির হোসেন, বখতেয়ার, জাবের আহমদ, আইল্যার আবুল কালাম, জয়নাল আবেদিন, লম্বাবিলের ফরিদুল আলম, লালু মিয়া, মমতাজ মিয়া, আয়াছ উদ্দিন, আলম, ফরিদ, কালা মিয়া, মো. মমতাজ, কোরবান আলী, জাফর আলী, শফিক, ফরিদ, রফিক, আবু বক্কর, শাহ আলম, বাবুল, ফজল করিম, বেলাল, আকতার হোসেন, মিজান, মমতাজ, আহমদ হোসেন, ওয়াবরাংয়ের সৈয়দুল আমিনের ছেলে আব্দুল গাফফার, নূর আলম, আনোয়ারুল ইসলাম নয়ন, সোনা মিয়া, জাহেদ হোছাইন, শামসুল আলম ভেক্কা, বাদশা মিয়া, মো. আলম শাহিন, জাহাঙ্গীর আলম, জয়নাল আবেদিন, আবুল হোসেন, মো. নূর, আব্দুর রহমান, বোরহান উদ্দিন, মিজানুর রহমান, গিয়াস উদ্দিন, বেলাল আহমেদ, টেকনাফের রঙ্গীখালীর কবির আহমেদের ছেলে হেলাল আহমেদ, বশির আহমদ, হোসাইন আহমদ আনিম, মো. ফোরকান, লোকমান, জাহাঙ্গীর, সরোয়ার, জসীম উদ্দিন, টেকনাফের নয়াপাড়ার আব্দুল খলিলের ছেলে লম্বা জামাল উদ্দিন, ছৈয়দুল আমিন চৌধুরী প্রিম, নুরুল আমিন চৌধুরী, মোহাম্মদ ইমরান, হামিদ হোসেন, সরওয়ার কামাল, মোহাম্মদ সেলিম, আব্দুল আমিন, নুরুল ইসলাম, আমির হামজা, মোহাম্মদ তৈয়ব, মো. জামাল, আইয়ুব, কালাম হোসেন, বার্মাই ওসমান, আক্তার হোসেন, আব্দুল আমিন, নূর মোহাম্মদ, মোহাম্মদ সৈয়দ, ওসমান গনি, মো. ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, মো. শফিউল্লাহ, টেকনাফের নাইট্যংপাড়ার মো. ইসলাম, শফিউল্লাহ, সমসু গঙ্গিমা, ফরিদ, বাদশা, জহির আহমদ, সৈয়দ আলম, ইসমাইল, নজির আহমদ, মো. কামাল, সামসু, মোস্তাক আহমদ, এমদাদ, মো. কামাল, মো. আলী, জিয়াবুল, মো. ইউনুছ, মো. সেলিম, এনায়েত উল্লাহ, মো. ইসলাম, আমিন উল্লাহ বুলু, কবির আহমদ, বদি আলম, মো. শামিম, মো. কালা, মনির আলম, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ব্যবসায়ীপাড়ার নুরুল কবিরের ছেলে মো. ইকবাল, ফরিদ উল্লাহ, মওলানা ইউনূছ, ইমাম হোসেন, সিরাজুল ইসলাম, ছৈয়দ আহাম্মদ, সুলতান আহামদ, আমির হোসেন, জাকারিয়া, নুরুল আলম, মো. নুরুজ্জামান, আবদুস সালাম, আবদুর রহিম, আবদুল গফুর, মো. সেলিম, আবদুর রহমান ধলাইয়া, এনায়েত উল্লাহ, মো. শরিফ, হামিদুল হক, নুরুল আমিন, মো. বেলাল, আলমগীর, জাকির আহম্মদ, নুরুল কবির ওরফে ডুরা কবির, আনোয়ার, আমির বসত, আবু তাহের, দেলোয়ার, মিজানুর রহমান, মো. আলম, আনোয়ার ইসলাম, আবু তাহের কাজল, আইয়ুব আলী, আবদুর রহিম, শফিকুল ইসলাম, ইউছুফ আলী, হামিদুল হক, জামাল হোসেন, কবির আহাম্মদ, মুজিবুল্লাহ, সাইফুল ইসলাম, হাজী রহিম উল্লাহ, আনোয়ার হোসেন, নুরুল ইসলাম, দিলদার মিয়া, নূর হোসেন, দিদার মিয়া, আবদুর রহমান, আমির হোসেন, হোসেন আহামদ, সৈয়দ হোসেন, নূর হোসেন এবং বান্দরবানের জলপাইতলীর সুলতান আহমেদের ছেরৈ শাহ আলম। –

সমকাল

পাঠকের মতামত