প্রকাশিত: ০৩/০৫/২০১৮ ১০:০২ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৩:২০ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক:;
তিন চার দিনের ছুটি নিয়ে ঘুরতে বের হলে প্রথমেই আসে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের নাম। দেশ ও দেশের বাইরের অসংখ্য পর্যটক আসেন কক্সবাজারে। তাই সেখানে বাড়তি বিনোদন হিসেবে ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তৈরি হয় শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। তাও হয়ে গেছে ৪ বছর। কিন্তু শুরুর দিকের মতোই পড়ে আছে এ স্টেডিয়াম। অযত্ন আর অবহেলায় আরও বেহাল দশা স্টেডিয়ামটির।

বছর দুই আগে মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভালের প্রথম আসরে কক্সবাজার স্টেডিয়াম নিয়ে মহা পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন বিসিবির গ্রাউন্ডস অ্যান্ড ফ্যাসিলিটিজ কমিটির ম্যানেজার সৈয়দ আব্দুল বাতেন। ১৪০ কোটি টাকার বিশাল বাজেটে এ স্টেডিয়াম সংস্কারের কথাও বলেছিলেন। মিডিয়া সেন্টার, ডরমেটরি, অ্যাকাডেমি ভবন, জিম, সুইমিংপুল নির্মাণে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কাছে ১৪০ কোটি টাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন পরিকল্পনা দিয়েছিল বিসিবি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনুমোদনের পর প্রকল্পটি আটকে আছে একনেকে।

যদিও শুরুতে বলা হয়েছিল শেখ কামাল কমপ্লেক্সের কাজ সম্পূর্ণটাই হবে বিসিবির অর্থায়নে। তবে এখন আর সে পথে হাঁটছে না বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। সরকারী অর্থায়ন পেলেই হবে এর কাজ। বিসিবির গ্রাউন্ডস অ্যান্ড ফ্যাসিলিটি কমিটির ব্যবস্থাপক সৈয়দ আব্দুল বাতেন এ বিষয়ে বলেছেন, ‘কক্সবাজার স্টেডিয়ামের উন্নয়ন কেন আটকে আছে এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। একসময় বিসিবি এটি নিজস্ব অর্থায়নে করতে চেয়েছিলো। কিন্তু এখন আর তা নেই। এটি সরকারের অর্থায়নেই সম্পন্ন করা হবে। কিন্তু সরকারের অর্থায়ন কোন পর্যায়ে আছে, সে বিষয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তথ্য জানাতে পারবে।’

বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে। কিন্তু জানা নেই তাদেরও। কিছুই জানেন না বলে জানালেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মাসুদ করিম, ‘এই মুহূর্তে আমি কিছুই জানি না। সম্পূর্ণ তথ্য জেনে জানাচ্ছি-’ এই বলেই লাইন কেটে দেন ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এই সচিব। এরপর আর ফোনই ধরেননি।

বর্তমানে পুরো কমপ্লেক্স এরিয়াকে মনে হবে শুনশান কোনো লোকালয়। অনুশীলন উইকেটগুলোতেও নেই কোনো প্রাণ। অস্থায়ীভাবে বসানো ছোট একটি ভবনের অবস্থাও করুণ। ড্রেসিংরুমেও নেই তেমন সুযোগ সুবিধা। প্রেসিডেন্ট বক্স থেকে তো খোলা আকাশই দেখা যায়। কিন্তু এটা হতে পারতো অপার সৌন্দর্য্যের নিদর্শন। মূল মাঠের সামনেই সবুজের সমারোহ। ঝাউ বন পেরুলেই সমুদ্র, ঢেউয়ের গর্জন। সৈকতের পাশে সৌন্দর্যের অবলীলায় মুগ্ধ করতে পারে যে কোন ব্যক্তিকে।

২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়া টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের ভেন্যুর তালিকায় ছিলো কক্সবাজার স্টেডিয়াম। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ কাজ শেষ করতে না পারায় এই মাঠে ম্যাচ আয়োজন আর সম্ভব হয়নি। তবে ২০১৫ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে কক্সবাজারে বেশ কয়েকটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া গত বছরের মার্চে ইমারজিং এশিয়া কাপের আসরও অনুষ্ঠিত হয় এ স্টেডিয়ামে।

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কক্সবাজার স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার আহসানুল হক বাহার জানালেন, ‘আমরা সব সময় একটা চাহিদাপত্র পাঠাই যে আমাদের এই এই চাহিদা। ওনারা ওটা বাতেন সাহেবকে দিয়ে দেন। এরপর প্রসেসিংয়ে এটা এগিয়ে যায়। হচ্ছে, হবে বলেই আশ্বাস পাচ্ছি শুধু। সাড়া পেতে একটু সময় লেগে যায়। যথাসময়ে যদি কাজ না করি তাহলে মাঠে তো সমস্যা হয়ই। বৃষ্টি হলে পানি উঠে যায়। ছাদ সবগুলো ফুটো ফুটো হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। এগুলো প্রায় ৬-৭ মাস ধরেই জানাচ্ছি। আর মাস্টার্স কাপের পরে যে হবে সেটা বলেছেন আমাদের বাতেন ভাই।’

তবে আসল কথা এ ভেন্যু বিসিবির পরিকল্পনায় আর নেই। সরকারি অনুদান পেলেও সাদামাটা ভাবেই কাজ চলবে। কারণ স্টেডিয়ামের আধা কিলোমিটারের কম দূরত্বে অবস্থিত কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। আর এ বিমানবন্দরের রানওয়ে পাশেই অবস্থিত এ স্টেডিয়াম। ফলে স্টেডিয়ামে ফ্লাড লাইট ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি উঁচু গ্যালারি নির্মাণও সম্ভব নয়। তাই আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের কাজটি বেশ কঠিনই। এছাড়াও কক্সবাজারের রামুতে তৈরি হচ্ছে আরও একটি স্টেডিয়াম। সরকারের মূল ফোকাস এখন সেখানেই। তাই শেখ কামাল স্টেডিয়ামে সরকারি অনুদান কতোটুকু পাবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

সুত্র: পরিবর্তন

পাঠকের মতামত