প্রকাশিত: ২১/০৮/২০১৬ ৮:১৭ এএম

অবশেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন এসপি বাবুল আকতার। চাকরি থেকে অব্যাহতির আবেদন প্রত্যাহার করে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে দু’টি চিঠি লিখেছেন তিনি। এর মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পত্রটি লেখেন ৯ আগস্ট এবং পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (প্রশাসন) বরাবর পত্রটি লেখেন গত ৪ আগস্ট।
পত্র দু’টির মূল বক্তব্য- গত ২৪ জুন ১৫ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদকালে বাবুল আকতার বাধ্য হয়ে তার পদত্যাগপত্রে সই করেছিলেন। ওই সময় তিনি পরিস’তির শিকার হয়েছিলেন। কিন’ পত্র দু’টির বাক্য দীর্ঘ না হলেও জনমনে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। কেন ও কী কারণে সেদিন পদত্যাগপত্রে সই করতে বাধ্য হয়েছিলেন বাবুল আকতার।
এসব বিষয়ে জানতে শনিবার একাধিকবার মোবাইলে কল করা হলেও রিসিভ করেননি বাবুল আকতার। মুখ খোলেননি সিএমপি’র কোনো কর্মকর্তাও। গতকাল একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, চাকরি ফিরে পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে ঘুরছেন বাবুল আকতার।
আবেদন পত্রে বাবুল আকতার লিখেন, গত ৫ জুন তার স্ত্রী মিতু আততায়ীর হাতে নির্মমভাবে খুন হন। ওই ঘটনার পর অবুঝ দুই শিশুসন্তান নিয়ে সীমাহীন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যান বাবুল আকতার। শোকাহত ও অসহায় অবস’ায় যখন জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় অতিবাহিত করছিলেন ঠিক তখন ২৪ জুন ‘পরিসি’তির শিকার’ হয়ে চাকরির অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষর করেন তিনি। স্ত্রীর মৃত্যুশোক, সদ্য মা’হারা শিশুদের প্রতিকূল ও বিপর্যস্ত মানসিক অবস’ায় অনিচ্ছাকৃতভাবে অব্যাহতি পত্রে সই করেন তিনি।
বাবুল আকতার আরো লিখেন- সৎ পুলিশ অফিসার হিসেবে এবং তার সন্তানদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হলো তার চাকরি। তাই তিনি অব্যাহতিপত্রটি প্রত্যাহারের আবেদন জানান। অব্যাহতি পত্র স্বেচ্ছায় দাখিল করেননি বলেও চিঠি দু’টিতে উল্লেখ করেন বাবুল আকতার। সিএমপি’র এক কর্মকর্তা জানান, বাধ্য হয়ে চাকরির অব্যাহতিপত্রে সই করলেও কী কারণে তা হয়েছিল এর কোনো ব্যাখা চিঠি দু’টিতে দেননি বাবুল আকতার।
এ কর্মকর্তার মতে, গত ২৪ জুন শ্বশুর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বাবুল আকতারকে ১৫ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ কারা করেছিল। তার কথা (বাবুল আকতার) সত্যি হলে-পদত্যাগ পত্রে সই করতে কেন তাকে বাধ্য করা হয়েছিল কিংবা ঘটনার দুইমাস ১৫ দিন পরেও কেন মিতু হত্যাকাণ্ডের সোর্স মুছাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হলো।
কেন মিতু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি নবী ও রাশেদ ‘ক্রসফায়ারে’ মারা গেল। দেশের মানুষ এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো পায়নি। তাহলে মিতু হত্যার রহস্য অনাবৃত থেকে যাবে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি কিংবা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনু হত্যার মতো।
এর আগে গত ১৩ জুন পুলিশের আইজি শহীদুল হক বলেছিলেন, ‘মিতু হত্যায় জঙ্গি জড়িত কি-না নিশ্চিত নই। তবে বাবুল আক্তারের পেশাদারিত্বের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কোনো আসামি এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে।’ একইসময় সিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্যের ভাষ্য ছিল, ‘মিতু হত্যায় জঙ্গি, স্বর্ণচোরাচালানি কিংবা সংক্ষুব্ধ কোনো সন্ত্রাসী জড়িত থাকতে পারে।’
গত ৫ জুন সকালে নগরের জিইসি মোড়ে স্ত্রী হত্যার পর থেকে নিজ কর্মস’লে অনুপসি’ত সদর দপ্তরে আর যাননি বাবুল আকতার। মূলত স্ত্রী হত্যার আগে থেকে সদর দপ্তরে সংযুক্ত এসপি বাবুল আকতার গত ৫ জুন থেকে নিজ কর্মস’লে অনুপসি’ত থাকলেও গত ৩ আগস্ট সদর দপ্তরে গিয়ে পুলিশের আইজিসহ সিনিয়র অফিসারদের সাথে সাক্ষাত করেন বাবুল আকতার।
গত ২৫ জুন অনেকটা নাটকীয়ভাবে নিজের স্ত্রীকে ‘হত্যার’ গুজব ছড়িয়ে বাবুল আকতারকে ঢাকার শ্বশুরবাড়ির থেকে মধ্যরাতে সদর দপ্তরে ডেকে নিয়ে টানা ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন পুলিশের উর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তা। এরপর বাসায় ফিরিয়ে দেয়া হলেও বাবুল আকতার স্বপদে যোগদান করেননি।
এ সময় গণমাধ্যমে খবর বেরিয়ে ছিল, জিজ্ঞাসাবাদকারী ওইসব কর্মকর্তারা বাবুল আকতারকে বলেন, ‘স্ত্রী মিতু হত্যায় তোমার জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। তোমার কাছে দুটি অপশন- ‘হয় চাকরি ছাড়, নইলে জেলে যেতে হবে।’ এর মধ্যে প্রথম শর্তটি বেছে নেন বাবুল আকতার। এ সময় তার কাছ থেকে পদত্যাগপত্রে সই নিয়ে নেয়া হয়।
এ ঘটনার পর বাবুল আকতার চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে প্রচার পায়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে নানা খবর বের হলেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে বাবুল আকতার নিজেও এতদিন মুখ খোলেননি। অবশেষে গত ১৮ আগস্ট মুখ খোলেন বাবুল আকতার।
৫ জুন নগরের জিইসি মোড়ে এলাকায় ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে গুলি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হন এসপি বাবুল আকতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় বাবুল আকতার বাদি হয়ে অজ্ঞাত তিনজনের বিরুদ্ধে নগরের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। গত ৮ জুন এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাটহাজারী থেকে আবু নছর ওরফে গুন্নুকে গ্রেফতার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ।
মিতু হত্যা মামলায় গ্রেফতার হওয়া দুই আসামি ওয়াসিম ও আনোয়ার ২৬ জুন আদালতে জবানবন্দি দেন। এতে তারা উল্লেখ করেন, হত্যাকাণ্ডে ওয়াসিম, আনোয়ার, মো. রাশেদ, নবী, মো. শাহজাহান, কামরুল সিকদার ওরফে মুছা ও মো. কালু অংশ নেন। তাদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে ছিলেন ওয়াসিম, মুছা ও নবী। মাহমুদাকে ছুরিকাঘাত করেন নবী। এর মধ্যে গ্রেফতারের পর রাশেদ ও নবী পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। পুলিশের দাবি, সোর্স মুসাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে।
ভোলা অস্ত্র সরবরাহ করেন। জবানবন্দিতে আবু নছরের নাম আসেনি। মিতু হত্যা মামলায় এখনো পলাতক আছে আসামি কালু। পুলিশের হাতে গ্রেফতার আছে ওয়াসিম, আনোয়ার, শাহজাহান, মুছার ভাই সাইদুল শিকদার ওরফে সাকু, অস্ত্র সরবরাহকারী এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা ও ভোলার সহযোগী মনির।

পাঠকের মতামত