প্রকাশিত: ২৪/০৬/২০২০ ৯:২২ পিএম

আনছার হোসেন::
কক্সবাজার সদর উপজেলায়, বিশেষ করে কক্সবাজার পৌরসভায় যখন বিশ্ব মহামারি ‘করোনাভাইরাস’ তার তান্ডব চালাতে শুরু করেছিল, ঠিক তখন থেকেই নানাপ্রান্ত থেকে একটাই রব উঠেছিল, শনাক্ত হওয়া রোগীর সংস্পর্শে আসা লোকজনদের ‘কন্ট্রাক্ট টেসিং’ যেন করা হয়। কিন্তু কেউ সেই দিকটার প্রতি এতদিন কোন নজরই দেননি। কক্সবাজার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সাধারণ মানুষের এই দাবি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছে। আর সেই গাফেলতির ফলে এখন করোনা রোগীর সংখ্যা কক্সবাজার সদর তথা কক্সবাজার পৌর এলাকায় জেলার সব উপজেলাকে ছাড়িয়ে গেছে। জেলার অন্য ৭টি উপজেলা ও ৩টি পৌরসভা মিলে যে রোগী শনাক্ত হয়েছে, তার কাছাকাছি রোগী ধরা পড়েছে কক্সবাজার সদরে। মঙ্গলবার (২৩ জুন) পর্যন্ত কক্সবাজার সদরে করোনা রোগীর সংখ্যা ৯৭১ জন।

কক্সবাজার সদরে এই অত্যধিক সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার জন্য একটি কারণই চিহ্নিত করা হয়েছে, তা হলো সঠিক সময়ে সঠিকভাবে কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং না করা।

সেই ‘কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং’য়ের দাবি যখন কেউই শুনছে না, তখন স্বউদ্যোগী হয়ে এগিয়ে এসেছে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ। মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও দেশের অন্যতম প্রধান রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অনুপম বড়ুয়ার নেতৃত্বে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কক্সবাজার পৌরসভা এলাকায় শনাক্ত হওয়া রোগীদের সংস্পর্শে আসা সকলকে চিহ্নিত করে করোনার উপসর্গ থাকা ব্যক্তিদের টেষ্টের আওতায় নিয়ে আসার।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের এই উদ্যোগের সাথে যুক্ত হয়েছে কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিস, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়ার নেতৃত্বে ৬ সদস্যের এই উদ্যোগী টিমে যুক্ত আছেন সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি ডা. মাহবুবুর রহমান, সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মহিউদ্দিন মো. আলমগীর, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ক্লিনিক্যাল ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দুইজন প্রতিনিধি ডা. সুরাইয়া বেগম ও ডা. আসমা ফেরদৌসী।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ সুত্র মতে, চলতি মাসের ৫ তারিখ থেকে আজ ২৪ জুন পর্যন্ত কক্সবাজার পৌরসভা এলাকায় শনাক্ত হওয়া ৫২৫ জন করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসা পরিবারের সদস্য ও আশপাশের লোকজনদের চিহ্নিত করা হবে। এ জন্য ‘রেড জোন’ কক্সবাজারে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালনকারি ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবককে ডাটা সংগ্রহের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই স্বেচ্ছাসেবকদের নেতৃত্ব দেবেন মোহাম্মদ ফয়সাল হুদা নামের এক স্বেচ্ছাসেবক।

সুত্র মতে, ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবককে পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে দায়িত্ব বন্টন করা হয়েছে। প্রতি ওয়ার্ডে ৫ জন করে দায়িত্ব পালন করবেন। এই ৫ জনেরও একজন টিম লিডার থাকবেন। তারা আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে ডাটা সংগ্রহ করে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে জমা দেবেন।

এই স্বেচ্ছাসেবকরা একটি নির্দিষ্ট ফরমে করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের ডাটা সংগ্রহ করবেন। একই সাথে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেয়া করোনা রোগী ও উপসর্গে ভোগা ব্যক্তিদের জন্য চিকিৎসাপত্র ও পরামর্শও বাড়ি বাড়ি পৌছে দেবেন। এছাড়াও করোনা আক্রান্ত পরিবারে যাদের ঘরে বাজার করার মানুষ নেই, বাজারে যাওয়ার সুযোগ নেই, সে সব পরিবারের দৈনন্দিন বাজার ও সওদাপাতিও করতে সহযোগিতা করবেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যরা।

তবে এই স্বেচ্ছাসেবকদের গলায় কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া, কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নজিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক উজ্জল করের দস্তখত করা কার্ড থাকবে। এই কার্ড ছাড়া অন্য কেউ এই কাজে যুক্ত হতে পারবেন না।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ক্লিনিক্যাল ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির কক্সবাজার ভিশন ডটকমকে জানান, কক্সবাজার জেলায় মঙ্গলবার (২৩ জুন) পর্যন্ত দুই হাজার ২০১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে শুধুমাত্র কক্সবাজার সদরেই শনাক্ত হয়েছে ৯৭১ জন।

তিনি জানান, কক্সবাজার সদরের ৯৭১ জনের মধ্যে চলতি ৫ জুন থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া ৫২৫ জন রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হবে এবং তাদের করোনা টেষ্টের আওতায় আনা হবে। এছাড়াও ২৪ জুন থেকে শনাক্ত হওয়া পরবর্তী রোগীদেরও এই ডাটাবেসের আওতায় আনা হবে এবং তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হবে।

ডা. মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির আশা করছেন, এই ‘কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং’ শেষ করা গেলে কক্সবাজার সদর, বিশেষ করে কক্সবাজার পৌর এলাকায় করোনা রোগী দ্রুত কমে আসবে এবং করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। সুত্র:কক্সবাজার ভিশন

পাঠকের মতামত

পুলিশ থেকে বাঁচতে জীবনটাই দিলেন সিএনজিচালক

গ্রামের চন্দনাইশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ...

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চলন্ত সিএনজিতে সিলিন্ডার বি’স্ফোরণ, চালক নিহত

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চন্দনাইশ এলাকায় চলন্ত সিএনজি অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুনে দগ্ধ হয়ে ...