প্রকাশিত: ২০/০১/২০২২ ১:১৭ পিএম

সুজাউদ্দিন রুবেল::
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতেও ভাসানচরের মতো অত্যাধুনিক বহুতল ভবন নির্মাণের চাপ সৃষ্টি জন্য আগুন লাগানোর নাশকতা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এমন তথ্য পেলেও স্পর্শকাতর বিষয় বলে কিছুটা আড়াল করার চেষ্টা চলছে।

চলতি মাসেই ক্যাম্পে ৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় করোনার বিশেষায়িত ৭০ শয্যার একটি হাসপাতালসহ পুড়ে গেছে রোহিঙ্গাদের সাড়ে ৬শ’ ঘর। আর নাশকতার পাশাপাশি অনিয়ন্ত্রিত গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারও আগুন লাগার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ফায়ার সার্ভিস।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ আশ্রয়শিবির কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং মেগা ক্যাম্প। এখানকার ২৬টি আশ্রয়শিবিরে নতুন পুরনো মিলে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। তাদের বসবাসের জন্য রয়েছে দেড় লাখের বেশি বসতি। যেগুলো বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে নির্মিত।

কয়দিন যেতে না যেতেই কোনো না কোনো ক্যাম্পে আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। নতুন বছরের শুরুর ১৫ দিনের ব্যবধানে ৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। সাধারণ রোহিঙ্গারা এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে শুধুমাত্র দুর্ঘটনা মনে করছে না। এমন পরিস্থিতিতে নিরীহ রোহিঙ্গারা পড়েছে অস্বস্তিতে।

ক্যাম্প-৫-এর বাসিন্দা আয়ুব বলেন, আমরা মনে করি, রাতের ২টা সময় তো কেউ রান্না করে না। অন্য কেউ দুশমনি করে আগুনটা লাগিয়ে দিয়েছে। রাতের ২টার সময় কেউ কাজকর্ম করে না। কিন্তু কে বা কারা আগুন দিয়ে এটা জানতে পারেনি।

ক্যাম্প-৫ বি-ব্লক-২-এর বাসিন্দা ইলিয়াছ বলেন, রাতের ২টা হচ্ছে ঘুমের সময়। ঘুমের সময় আগুন লাগাটা বুঝতে পারছি না। কেউ রাজনীত করে আগুন লাগাচ্ছে, নাকি কেউ দুশমনি করে করছে এটা বুঝতে পারছি না।

একই ক্যাম্পের বাসিন্দা সাইফুল বলেন, ক্যাম্পে বারবার আগুন ধরছে এবং সেটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কারণ বাঁশ ও ত্রিপলের সব ঘর, একটা সঙ্গে একটা লাগোয়া। ফলে সব ঘর দ্রুত আগুনে পুড়ে যায়।

ক্যাম্প-৫ এর বাসিন্দা ছৈয়দ আলম বলেন, রাতে কেউ আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে, কারণ এত রাতে তো কারো ঘরে আগুন জ্বালায় না। কারা এসব করেছে তাদের তো কোনো হদিস পাচ্ছি না। এসব জন্য সমস্যা চলছে।

আরেক রোহিঙ্গা নুর আহমেদ বলেন, নতুন করে ঘর যদি লোহা দিয়ে বেঁধে দেয় ভালো হবে। ইট দিয়ে যদি গাঁথুনি করে দেয়। এসব দিয়ে যদি ঘর বাঁধে তাহলে আর এসব ঘরে আগুন ধরবে না।

ক্যাম্পে ৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি, কিন্তু পুড়ে গেছে সাড়ে ৬শ’ বসতি। আর সবশেষ ক্যাম্প ৫-এ মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে আগুন লাগে। সবকিছু মিলিয়ে এসব অগ্নিকাণ্ডের পেছনে নাশকতা এবং রহস্য রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ফায়ার সার্ভিস।

উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, ক্যাম্পের বসতিগুলো বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি হয়েছে। এখানে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী করার জন্য হয়তো আন্তর্জাতিক কোনো ষড়যন্ত্র চলছে। যাতে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য। এখানে একটি বিষয় খুবই রহস্যজনক। কারণ চলতি মাসে ৩টি অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। এসব অগ্নিকাণ্ডে সাড়ে ৬শ’ বসতি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কিন্তু একজন রোহিঙ্গাও হতাহত হয়নি। তার মানেই আগুন ধরিয়ে দেওয়ার আগে হয়তো রোহিঙ্গাদের বলে দেওয়া হয়, এখানে আগুন দেওয়া হবে। সুতরাং বিষয়টি পরিকল্পিত এবং রহস্যময়।

আরও পড়ুন: ক্যাম্পে আগুন: ঘুরে দাঁড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা

বারবার অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলেও জানান এই জনপ্রতিনিধি।

ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, নোয়াখালীর ভাসানচরে দারুণ স্থাপনা করা হয়েছে। অনেক সুযোগ-সুবিধায় সেখানে বসবাস করছে অনেক রোহিঙ্গা। হয়তো রোহিঙ্গারা উখিয়া ও টেকনাফের এসব ক্যাম্পে অত্যাধুনিক স্থাপনা করে দেওয়ার জন্য বারবার আগুনে লাগিয়ে দিচ্ছে।

আর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এপিবিএন বলছে, অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কোনো দুষ্কৃতিকারীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উখিয়াস্থ ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক মো. নাঈমুল হক বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কোনো দুর্বৃত্তদের সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা আমরা অনুসন্ধান করছি। কোনো দুষ্কৃতকারী শনাক্ত হলে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

গেল বছরের ২২ মার্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে। এই আগুনে পুড়ে যায় ক্যাম্পে ১০ হাজার বসতি আর মারা যায় ১১ জন রোহিঙ্গা। সুত্র: সময় টিভি

পাঠকের মতামত

পুলিশ থেকে বাঁচতে জীবনটাই দিলেন সিএনজিচালক

গ্রামের চন্দনাইশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ...

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চলন্ত সিএনজিতে সিলিন্ডার বি’স্ফোরণ, চালক নিহত

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চন্দনাইশ এলাকায় চলন্ত সিএনজি অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুনে দগ্ধ হয়ে ...